বরিশালে ২২ বছর পরিত্যাক্ত সুইমিং পুল

বরিশালে নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে একমাত্র সুইমিং পুল। নির্মাণ ত্রুটি এবং অনিয়মের কারণে আলোর মুখ দেখেনি সাঁতার শেখার এই পুলটি। দীর্ঘ ২২ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সুইমিং পুলের ভেতরের আসবাবপত্র পানির ফিটিংসসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। ফলে সাঁতার শেখার সুযোগ পাচ্ছেনা শিশু-কিশোররা।
বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থা জানায়, বরিশালের মানসম্পন্ন সাতারু সৃষ্টি এবং শিশু-কিশোরদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে সুইমিং পুল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নগরীর চাঁদমারী স্টেডিয়ামের বাইরে সুইমিং পুলের জন্য স্থান নির্বাচন করে। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ সালের ১ জুন সুইমিং পুলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন. হক অ্যান্ড সন্স সুইমিং পুলের কাজ পায়। ওই বছরই অক্টোবর মাসে সুইমিং পুলের কাজ শেষ হয়।
কাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষা মূলকভাবে সুইমিং পুলে পানি ওঠাতে গিয়ে সেখানে ফাঁটল ধরা পড়ে। পরবর্তীতে ওই ফাঁটল আরো বড় আকার ধারণ করে। ওই অবস্থায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুইমিং পুলটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতে চাইলে ক্রীড়া সংস্থা অপরাগতা প্রকাশ করে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই ফাঁটলের কোন সমাধান না করেই পুরো বিল উত্তোলন করে নেয়। ওই অবস্থায় ২০০০ সালের ১১ এপ্রিল সুইমিং পুলটির উদ্ধোধন করা হয়। সুইমিং পুল উদ্বোধন হলেও তা কোনদিনই কাজে আসেনি।
প্রায় পাঁচ বছর পর সুইমিং পুল ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী সময় ভাঙার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে পুলের গ্রাউন্ড ও চারপাশের মেঝেতে টাইলস বসানোসহ আনুষব্দিক কাজের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ছাড়া পূর্বের সুইমিং পুলের ফাঁটল সারানো ও সড়ক নির্মাণের জন্য আরো ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই টাকায় সুইমিং পুলের ফাঁটল সারানোসহ সড়কের কাজও হয়েছে। ৪ লাখ ৩২ হাজার গ্যালন পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সুইমিং পুলে পানি উত্তোলনের জন্য ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পাম্প স্থাপন করা হয়। ওই পাম্প দিয়ে সুইমিংপুলে পানি ওঠানোয় অনেক সময় লেগে যেতো। এ সমস্যা সমাধানে আরেকটি পাম্প স্থাপন করা হয়। ওই দুটি পাম্পই পরে অকেজো হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে নিম্ন মানের টাইলস বসানোর ফলে পানি ধরে রাখতে পারেনি সুইমিং পুল। পানি দিলে টাইলস চুষে বের হয়ে পুরো এলাকা ডুবে যেত।
এ ব্যাপারে সুইমিং পুলের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গভীর পাম্প বসানো হলেও পানির স্তর না পাওয়া সুইমিং পুলে কখনোই পানি তোলা সম্ভব হয়নি। ওই স্থানে সিটি করপোরেশনের আরো দুটি পাম্প রয়েছে। সেখানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াই স্বাভাবিক। জেনে শুনে ওই স্থানে পাম্প বসানো ঠিক হয়নি। পাম্প থেকে পানি উঠুক আর নাই উঠুক শুধুমাত্র ঠিকাদার হিসেবে পাম্প বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল সুইমিং পুলের সকল ঠিকাদারের মূল উদ্দেশ্য।
বরিশালে শিশু-কিশোররে সাঁতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বেরসকারি সংস্থা সেভ দ্যা কোস্টাল পিপল। এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু উদ্বেগ প্রকাশ করে ভোরের আলোকে বলেন, বরিশালে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা না থাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে। ২২ বছর আগে সুইমিং পুল নির্মাণ করে তা কোন আজে আসেনি। ওই সময় কাজে দুর্নীতি হয়েছে, নিম্ন মানের কাজ হয়েছে। কিন্তু নির্মাতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয় হয়নি। তাই অনেক অর্থ ব্যয় করেও সুইমিং পুল ব্যবহার করা যায়নি। আমরা চাই দ্রুত সুইমিং পুল নির্মাণ করে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করা হোক।
এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, বরিশালের সুইমিং পুলটি শুরু থেকেই কোন কাজে আসেনি। সুইমিং পুল না থাকায় সাঁতার প্রশিক্ষণসহ সাঁতার প্রতিযোগিতা করতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সুইমিং পুলটি সংস্কার করে চালু করতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে সেটা এখনো অনুমোদন হয়নি। ওই প্রকল্প অনুমোদন হলে এটি ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে।