বরিশালে ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত পানিশোধনাগার কাজে আসছে না

বরিশালে গরম শুরু হওয়ার আগেই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি পানিশোধনাগার (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) দীর্ঘদিনও চালু করা হচ্ছে না। পানিশোধনাগার চালু না হওয়ায় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। ২০১৬ সালে নির্মাণ করা দুটি পানি শোধনাগর নাগরিকদের কোন কাজে আসছে না। দ্রুত পানি সংকট সমাধানে পানি শোধনাগার চালুর দাবি করেছে নগরবাসী।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, মহানগরের পলাশপুর এবং রূপাতলী এলাকায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে দুটি পানিশোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পরে বেশ কিছুদিন বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারণে পানিশোধনাগার চালু করা সম্ভব হয়নি। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও এর নির্মাণ কাজে ত্রুটি ধরা পরে। সেই অজুহাতে পানি শোধনাগার অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছ।
এদিকে দ্রুত পানি শেধনাগারে দ্রুত চালুর দাবি করেছে বরিশাল নগর উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধন সমন্বয় কমিটি। তারা অভিযোগ করেছেন, নগরের বাসিন্দাদের পানির চাহিদার অর্ধেকও পূরণ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন। গরমের শুরুতেই পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। অথচ প্রায় সাড়ে তিন কোটি লিটার পানি উৎপাদন ক্ষমতার পানি শোধনাগার পরে আছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন গভীর লনকূপ স্থাপন ও তাতে সাবমার্সিবল পাম্প লাগানোর অনুমতি দেওয়ায় ভূগর্ভস্থ পারি উত্তোলন করছে। যার ফলে পানির স্তর নেমে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। নগরের খাল-পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে পানিশোধনাগার চালু করা এবং ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব করার দাবি করেছেন তারা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন পানি বিভাগ জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৬ লাখ বাসিন্দার জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ লিটার পানির দরকার। করপোরেশন থেকে বর্তমানে ২ কোটি ৭ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। দিনে পানির ঘাটতি হচ্ছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ লিটার। নগরের দুই প্রান্তে দুটি পানিশোধনাগার থেকে দিনে ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব। ওই শোধনাগার চালু হলে পানির চাহিদা পুরন হওয়ার পরও অতিরিক্ত পানি থাকবে। কিন্তু পানিশোধনাগার দুটিতে নির্মাণ ত্রুটির কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এব্যাপারে একটি ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে পানিশোধনাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বরিশাল নগর সৌন্দর্য বর্ধন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু অভিযোগ করে বলেন, নাগরিকদের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে পানি। নগরের দুই প্রান্তে দুটি পানিশোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু সেদুটি নাগরিকদের সেবায় আসছে না। পানিশোধনাগার নির্মাণের পর থেকে একদিনের জন্যও পানি সরবরাহ করতে পারেনি। নির্মিত দুটি পানিশোধনাগার অনেকটা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। অবিলম্বে ওই শোধনাগার দুটি চালু করে পানির চাহিদা পূরণে উদ্যোগ নিতে হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগের সহকারী তত্তাবধায়ক মো. ছোহরাব হোসেন পান্না বলেন, বরিশাল নগরে পানির চাহিদার অর্ধেক পরিমান সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। ২ কোটি ৭ লাখ লিটার থেকে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব। বর্তমানে পানির সংকট তেমন একটা তীব্র নয়। তীব্র গরমের আগে একাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া নগরের দুইপ্রান্তে দুটি পানি শোধণাগারের ত্রুটিমুক্ত করে চালু করার জন্য করপোরেশন থেকে একটি ডিপিপি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্প অনুমোদন হলে পানির সমস্যা থাকবে না।