বরিশালের পরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা লুট, গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিশ

বরিশালের পরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা লুট, গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিশ


বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খাদ্য সহায়তার ৮০০ প্যাকেট চাল লুট করেছে বিক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা। কর্তৃপক্ষের বিতরণের অব্যবস্থাপনার কারণে ওই লুটের ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করতে গেলে এই ঘটনা ঘটে।
এর আগে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যের হাতে পরিবহন শ্রমিক রক্তাক্ত আহত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশ। 


নথুল্লাবাদ এলাকার শ্রমিকরা জনায়, গত ২৪ মার্চ থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লা রুটের বাস চলাচল বন্ধ। এ কারণে বেকার হয়ে পড়েছে বরিশালের কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক। স্বাভাবিক সময়ে শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হলেও গত দেড় মাসে শ্রমিকদের খোঁজখবর নেয়নি শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। এ কারণে হাজারো শ্রমিক পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। তীব্র সমালোচনার মুখে জেলা বাস মালিক গ্রুপ ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের জন্য ৮ টন চাল বরাদ্দ করে। তারা শ্রমিকদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রতি ব্যাগে ১০ কেজি করে মোট ৮০০ প্যাকেট তৈরি করে।


গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে কর্মহীন পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে এই চাল বিতরণের কথা। সাহায্যের চাল পাওয়ার আশায় সকাল ৬টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে পরিবহন শ্রমিকরা। মাত্র ৮০০ প্যাকেট করা হলেও সাহায্যের আশায় লাইনে দাড়ায় ৩ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। 


এদিকে লকডাউন ঢিলেঢালা হওয়ায় থ্রি হুইলার নিয়ে রাস্তায় নামা এক পরিবহন শ্রমিককে মারধর করে রক্তাক্ত আহত করে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য। এতে পুরো টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 
জেলা সড়ক পরিকন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ আহত শ্রমিককে হাসপাতালে পাঠানোর পর মূল টার্মিনাল ভবনে খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণ শুরু হয়। কিন্ত প্যাকেটের কয়েকগুন লোক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় সবাই খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার সংশয় দেখা দেয়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা লাইন ভেঙ্গে খাদ্য সহায়তার সকল চালের প্যাকেট লুট করে নেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশের সদস্যরা এসময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। শারীরিক দূরত্ব অনুসরণ ও গণজমায়েত রোধে তাদের কার্যকর কোন ভূমিকা দেখা যায়নি।  

বিমান বন্দর থানার ওসি জাহিদ-বিন আলম জানান, মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন ত্রাণ দিয়েছে। প্যাকেটের চেয়ে লোক কয়েকগুন বেশি হওয়ায় কেউ পেয়েছে, কেউ পায়নি। সাহায্যের পরিমান মানুষের থেকে কম হলে যা হয়। তবে কোন খাদ্য সহায়তা লুট হয়নি। 
এদিকে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব অনুসরণ ও গণজমায়েত এড়িয়ে চলার কথা বলা হলেও নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গতকাল এসবের কোন বালাই ছিলো না। ৩ হাজারের বেশি মানুষ সাহায্যের জন্য গা ঘেষে টার্মিনালে জড়ো হলে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশ। তারা শত চেষ্টা করেও শ্রমিকদের শারীরিক দূরত্ব ও গণজমায়েত থেকে বিরত রাখতে পারেননি। 

বিরূপ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বিমান বন্দর ওসি জাহিদ-বিন আলম বলেন, কি করবো বলেন? সরকার সব গার্মেন্ট, মার্কেট খুলে দিয়েছে। কিছু গণপরিবহন চলাচল শুরু করেছে। শ্রমিকরা ত্রাণ নিতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধির ব্যতয় ঘটালেও পরবর্তীতে তাদের সকলকে বিতারিত করা হয়।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির দাবী বরিশালের বাস মালিক গ্রুপভুক্ত ২০০টি বাসে ৩জন করে মোট ৬০০ কর্মজীবী শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থার লোকজন ইউনিয়নের সদস্য হয়ে আছেন।