বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়েছে রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে

বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়েছে রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে

পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।

অবসরে যাওয়ার প্রাক্কালে গতকাল বুধবার সামরিক বাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

২৯ নভেম্বর অবসরে যাচ্ছেন জেনারেল বাজওয়া। দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে সম্ভবত এটিই হতে পারে জনসমক্ষে তার শেষ বক্তৃতা প্রদান।

একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বলেন, তিনি এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান, যা পাকিস্তানের মানুষ সাধারণত এড়িয়ে যান। আর বিষয়টি হলো ১৯৭১ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ।

জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘আমি একটা তথ্য সংশোধন করে দিতে চাই। প্রথমত, পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হওয়া সামরিক নয়, ছিল রাজনৈতিক ব্যর্থতা। আর সেখানে লড়াইরত সেনার সংখ্যা ৯২ হাজার ছিল না, বরং এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪ হাজার। বাকিরা ছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন।’

কামার জাভেদ বাজওয়া বলেন, এই ৩৪ হাজার সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর আড়াই লাখ সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষিত ২ লাখ যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন এবং নজিরবিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। কিন্ত পূর্ব পাকিস্তানে লড়াই করা সেনাদের এ ত্যাগ দেশে স্বীকৃতি পায়নি, যা ছিল মহা অন্যায়।

পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর গত সাত দশকে দেশটির রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টিও স্বীকার করেন বাজওয়া। এ হস্তক্ষেপকে তিনি ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করে একই সঙ্গে ভুল করা ও দাম্ভিক আচরণের জন্য রাজনীতিকদেরও সমালোচনা করেন তিনি।

বাজওয়া বলেন, গত ৭০ বছরে বিভিন্নভাবে ‘রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ’ করার কারণে প্রায়ই সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা হয়। এ হস্তক্ষেপ ছিল‘অসাংবিধানিক’। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপ গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু এরপর সেনা বাহিনী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এবং রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে রাজনীতিতে বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর করবে না। বাজওয়া বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মেনে চলছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, সামরিক বাহিনী তার ‘ক্যাথারসিস’ বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থেকে বের হতে শুরু করেছে। আর এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোও ‘তাদের আচরণের আত্মবিশ্লেষণ করবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাজওয়া বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ভুলের কারণে দেশ সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এসব ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরি।

জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘বাস্তবতা হলো- পাকিস্তানে সামরিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ সবাই ভুল করেছে। আর এটাই সময় আমাদের তাদের কাছ থেকে শেখার এবং এগিয়ে যাওয়ার।’

বাজওয়া পাকিস্তানের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং দেশের সকল অংশীদারকে তাদের অহংকার দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।

মূলত পাকিস্তানের অর্থনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনীর বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির বৈদেশিক বিষয়সহ জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে সামরিক বাহিনী। এছাড়া ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই আজ পর্যন্ত তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।