আাজ ঘোষণা করা হবে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট। এই বাজেট আমাদের আগামীর পথে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটা প্রত্যাশা। এই বাজেট আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের মাইল ফলক ছুঁয়ে যাবার ইঙ্গিত দেবে। কৃষি নির্ভর বাংলদেশ এখনো কৃষির ওপরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছি। কিন্তু আমদের বাজেট এখনো কৃষিকে সেভাবে ছুঁয়ে যেতে পারেনি।
কেবল কৃষির কথা বললে ভুল হবে। একই সঙ্গে আমাদের বাজেটে শিক্ষা, সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও সেভাবে বরাদ্দ থাকছে না। সংস্কৃতিতে পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে ধ্বংসের মুখোমুখী আমাদের সংস্কৃতি। তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে বাংলাদেশ ভালোভাবে যাত্রা শুরু করলেও বাজেটে যেভাবে প্রভাব পড়ার দরকার সেভাবে পড়ছে না। সব সময় পিছিয়ে থাকছে শিক্ষা প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি। এই বাজেটে অবশ্যই এই বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে বলে মনে করছেন অনেকে। আমরা সেই প্রত্যায় থাকতে চাই।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি বাজেটই রেকর্ড ভেঙেছে। এবার তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হবে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে আসন্ন অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
সম্ভাব্য বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। বাজেটের এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের ঋণই মূল ভরসা। এ ঋণ ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে। এছাড়া নতুন বাজেটে সম্ভাব্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩.১ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) ধরা হয়েছে।
বাজেট সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা বিসদভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবেন। বাজেটে রাজস্ব কত, ঘাটতি কত, কোথা থেকে ঘাটতি মেটানো হবে। এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়। ওই আলোচা বাজেটে তেমন কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষক, সাধারণ মানুষ বাজেটের আকার, প্রকার, প্রবৃদ্ধি, খাটতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। জানতে চায়ও না। তাদের চাওয়া কৃষক তাঁর উৎপাদিত পন্যর যেন ন্যাজ্য মজুরী পায়। ধানের দাম যেন উৎপাদন খরচের চেয় কম না হয়। কৃষক যেন মাঠে কাজ করার পর স্বস্তিতে ঘুমাতে পারে। তাদের সন্তানরা যেন শিক্ষার সুযাগ পায়। বাজেট যেন কৃষিবান্ধব হয় এটাই তাদের প্রত্যাশা।
আমরা জানি, যে দেশ যত সংস্কৃতিতে এগিয়ে সে দেশ তত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশও সেই সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে। কিন্তু বাজেটে সংস্কৃতি ক্ষাতে বরাদ্দর চিত্র দেখলে মনে হবে সংস্কৃতির কোন প্রয়োজনই নেই। দেশে সংস্কৃতি চর্চার পথ সুগম না হলে কিশোর যুবকরা নেতিবাচক কাজের সঙ্গে বেশি যুক্ত হয়। যার নজির আমরা দেখেছি জঙ্গী সদস্য হচ্ছে শিক্ষিত যুবকরা। এটা একধরণের অশনিসংকেত। আমরা আর এধরণের ঘটনা দেখতে চাই না। তাই সংস্কৃতির দিকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে যুব সমাজ নেতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে না। তাই বাজেটে সংস্কৃতি চর্চায় বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।
দরকার গণমূখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষখাতে বরাদ্দ বাড়ানো। শিক্ষা উপকরণের দাম সাধারণ কৃষকের নাগালে রাখতে হবে। যাতে কৃষক তাঁর পন্য উৎপাদন ও বিক্রি করে সেই অর্থে জীবনযাপন ও শিশুদের শিক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
এবারের বাজেটে এমন প্রতিচ্ছবি থাকবে এমনা আশা করছি। আমরা চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলদেশে কৃষিবান্ধব একটি যুগোপযোগী বাজেট প্রনয়ণ করা হবে। যে বাজেট কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব সমৃদ্ধির পথে এগোনোর সকল সূচককে সমান গুরুত্ব দেবে।