বাজেটে সংস্কৃতি খাত প্রধান্য পাক

আমাদের দেশে সংস্কৃতি খাতটি সব সময় উপেক্ষিতই থেকে আসছে। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ সংস্কৃতি-ই হচ্ছে একটি জাতির অনন্য পরিচয়। সৃষ্টিশীল মানুষ গড়ার অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে সংস্কৃতি। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে সংস্কৃতিই মূল ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই দেশের পরিচয় বহন করে চলে। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপ দিতেও ভূমিকা রাখে সংস্কৃতি। কিন্তু আমাদের জাতীয় কোন বাজেটেই সংস্কৃতি খাতকে মূল্যায়ন করা হয় না। অবহেলিত ও অবমূল্যায়নের যাতাকলে পীষ্ঠ হতে থাকে সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতি চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা কমার কারণে দেশে নেতিবাচক কর্মকা- বেড়েই চলেছে। সৃজনশীল কাজে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় উগ্র জঙ্গীবাদের উত্থান, ধর্মীয় গোড়ামী এবং অপসংস্কৃতি চর্চার পথ সুগম হচ্ছে। যার প্রভাব পড়রছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ওপর। তাই সৃজনশীল কাজ বিশেষ করে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাজেট সন্তোষজনক হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রস্তাবিত বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে সেখান থেকে উত্তোরণ ঘটিয়ে সংস্কৃতি খাতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে বরাদ্দের দিকে তাকালে দেখা যাবে সবচেয়ে কম বরাদ্দ করা হয়েছে সংস্কৃতি খাতে। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ৫৮৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা অতি নগন্য বলে মন্তব্য করেছেন দেশের সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্বরা। তদের মতে, সংস্কৃতিকে উচ্ছষ্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। অথচ সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশের আত্ম পরিচয়। সংস্কৃতি হচ্ছে আয়না। কিন্তু অবমূল্যায়নের কারণে সংস্কৃতি নামের আয়নায় স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেছেন, দেশকে শিল্প সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যগতভাবে তুলে ধরতে হলে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সরকারকে আমরা বরাবরই বলে আসছি, মূল বাজেটের এক শতাংশ যেন সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার বরাবরই আমাদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এই খাতকে অবহেলার চোখে দেখা খুবই ভুল সিদ্ধান্ত। জাতীয় বাজেট যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় সংস্কৃতি খাতে পারসেন্টেজ আরো কমেছে। সুতরাং আমরা মনে করি, রাষ্ট্র যে সংস্কৃতি খাতকে অবহেলা করছে- এটা সরকারের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। চারদিকে অপসংস্কৃতির চর্চা বাড়ছে। সাম্প্রদায়িকতা উস্কে উঠছে। সরকার একদিকে বলছে আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ সংস্কৃতি বান্ধব জাতি, মানুষে মানুষে মৈত্রী বন্ধন গড়ে তুলতে চাই, কিন্তু বাস্তবতা হলো বাজেটে সরকারের সেই সব কথার প্রতিফলন এবারও ঘটেনি। সুতরাং আমরা মনে করি, আমরা সংস্কৃতি কর্মীরা এই খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।’
আমরা জানি, যে দেশ যত সংস্কৃতিতে এগিয়ে সে দেশ তত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশও সেই সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে। কিন্তু বাজেটে সংস্কৃতি ক্ষাতে বরাদ্দর চিত্র দেখলে মনে হবে সংস্কৃতির কোন প্রয়োজনই নেই। দেশে সংস্কৃতি চর্চার পথ সুগম না হলে কিশোর যুবকরা নেতিবাচক কাজের সঙ্গে বেশি যুক্ত হয়। যার নজির আমরা দেখেছি জঙ্গী সদস্য হচ্ছে শিক্ষিত যুবকরা। এটা এক ধরণের অশনিসংকেত। আমরা আর এধরণের ঘটনা দেখতে চাই না। তাই সংস্কৃতির দিকে আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তাই বাজেটে সংস্কৃতি চর্চায় বরাদ্দ বাড়ানো হোক।