বানারীপাড়ায় নান্দনিক স্কুল

প্রথম দর্শনে যে কারোর পার্ক বা দর্শনীয় স্থান বলে মনে হতে পারে। আসলে এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পুরো বিদ্যালয় ভবন, ক্লাস রুম, বারান্দা, অফিস কক্ষ এমনকি ভবনের সিলিং এমনভাবে রং-তুলির আঁচরে সাজানো হয়েছে যা দেখে মুগ্ধ সবাই। স্কুলে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন খেলার কক্ষ, শেখ রাসেল ফুলের বাগান, বিলবোর্ডে মনিষীদের বাণীসহ অনেক কিছু।
সবুজে ঘেরা এই স্কুলটির নাম মধ্য মলুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার একটি নান্দনিক স্কুল এটি।
১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির কার্যক্রম হতো একটি টিনসেড ভবনে। ২০১৬ সালে একটি দ্বিতল ভবনে পাঠদান শুরু হয় স্কুলের। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এই স্কুলে। ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাছিমা খানম। নতুন বভনে বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরুর পরের বছর থেকে তিনি পুরো স্কুল ভবন, ক্লাস কক্ষ, অফিস কক্ষ, ক্লাসের সিলিং এবং বারান্দাও শিশু বান্ধব, শিক্ষা বান্ধব, সুসজ্জিত, নয়নাভিরাম এবং আকর্ষণীয় করে তোলেন। এ জন্য সরকারি কিছু অনুদান পেলেও বাকী টাকার যোগান আসে স্থানীয় বিভিন্ন দানশীল ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহায়তায়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসিমা খানম বলেন, প্রাক প্রাথমিকের ‘শিশু কানন’ কক্ষ সাজানো হয়েছে কর্কশিট দিয়ে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পুরো বই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কক্ষের চার দেয়ালে। সিলিংয়েও কর্কশিট নিয়ে নানা নকশা করা। শিশুদের জন্য স্লিপার, ঘোড়াসহ নানা খেলনা রয়েছে।
এছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে পাঠ্যবই সংশ্লিষ্ট ছবি রং-তুলির নিপুন আঁচরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব কক্ষের সিলিংও রং-তুলি দিয়ে নানা নকশায় সাজানো। অফিস কক্ষের সিলিংয়ে নকশা এবং দেয়ালে তুলে ধরা হয়েছে মনিষীদের বাণী।
মাল্টি মিডিয়ার ক্লাশ রুমের সিলিংয়েও কর্কশিটের নকশা। আছে আকর্ষণীয় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তার পরিবারের সদস্যদের ছবি, জাতীয় চার নেতা, বীরশ্রেষ্ঠ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধকাীলন ছবির সংগ্রহ রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারে’। এই কক্ষের সিলিং সাজানো জাতীয় পতাকার আদলে। রয়েছে ‘পরিস্কার-পরিস্কার খেলা’ কক্ষ। প্রাচীন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সকল খেলার ছবি প্রিন্ট করে সাটানো আছে এই কক্ষের দেয়ালে। শিশুদের জন্য নানা খেলার উপকরন রয়েছে সেখানে। স্কুলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধু বং বঙ্গমাতার ছবি।
ভবনের দ্বিতল এবং নীচতলার বারান্দায় রং-তুলির আকর্ষণীয় নকশা এবং ফাঁকে ফাঁকে বাংলা বর্ণমালা, ইংরেজি অক্ষর এবং গাণিতিক সংখ্যা চিত্রায়িত করা হয়েছে। মূল ভবনের দেয়ালে রং-তুলির আঁচরে চিত্রায়ন করা হয়েছে পাঠ্যবই সংশ্লিষ্ট নানা ছবি, মনিষীদের বাণী, গ্রামীণ জনপদের নানা চিত্র এবং মীনা কার্টুন। কলাপসিবল গেট ও দরজায় জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রং করা। সবগুলো জানালা রং করা হয়েছে জাতীয় পতাকার আদলে।
স্কুল চত্ত্বরে ফুল বাগানে রঙ্গন, ম্যাসোন্ডা, বেলী, মালতি, দোপাটি, জবাসহ রয়েছে নানা জাতের ফুল গাছ।
ঝাউগাছের বেস্টনী দিয়ে স্কুল চত্ত্বর করা হয়েছে সবুজের সমারোহ। স্কুলের সামনে একটি স্তম্ভে বিদায় হজের বাণী এবং একটি বিলবোর্ডে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে লেখা আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক চিঠি এবং আরেকটি বিলবোর্ডে নানা নীতি বাক্য প্রদর্শন করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরও জানান, সরকারি অনুদান এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সার্বিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি আজ এই পর্যায়ে এসেছে। এ জন্য নিজেদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
এই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবিএম শফিকুল আলম বলেন, শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। পড়ালেখার মানও ভালো। দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে মানুষ তাদের স্কুল দেখতে আসে। এই স্কুলের সভাপতি হতে পেরে তিনি গর্বিত।
বানারীপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, গত ৯ সেপ্টেম্বরও তিনি বিভিন্ন স্কুলের ৪০ জনের বেশি শিক্ষকদের একটি দল নিয়ে ওই স্কুল দেখতে গিয়েছিলেন। এক কথায় মধ্য মলুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনন্য আদর্শ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটা অন্যদের অনুকরণ করার মতো