বানারীপাড়ায় ১৪ হতদরিদ্রের স্বাক্ষর জাল করে ৪ বছর ধরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চাল উত্তোলনের অভিযোগ

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় তিন ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে হতদরিদ্র পরিবারের স্বাক্ষর জাল করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ বছর ধরে তিন ইউপি সদস্য ১৪ জনের স্বাক্ষর জাল করে ওই চাল আত্মসাত করার অভিযোগে শাস্তি দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। হতদরিদ্র ১৪ জন সরকারের নগদ অর্থ সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।
বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম মিলে স্বাক্ষর জাল করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাত করেছেন। একই সঙ্গে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকায় সরকারের নগদ সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ওই ১৪জন বাসিন্দা।
এই ঘটনা জানাজানি হলে ভুক্তোভোগীরা ওই তিন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া রেজিস্ট্রি ডাক যোগে এই অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাঠিয়েছেন।
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়ার কার্ড এবং এবং নগদ অর্থ থেকে বঞ্চিতরা হচ্ছেন, উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মলুহার গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মজিদ (কার্ড নম্বর ৮১২), দিনমজুর মো. সুলতান (কার্ড নম্বর ৮৫২), কৃষক জাকির হোসেন (কার্ড নম্বর ৮১৭), দিনমজুর আব্দুছ ছালাম (কার্ড নম্বর ৮৬৩), কৃষক মেজবা উদ্দিন (কার্ড নম্বর ৮৬৭), দিনমজুর মো. মাসুম (কার্ড নম্বর ৮৭২), দিনমজুর মো. ফজলু (কার্ড নম্বর ৮৬৬), মেকার মো. জহিরুল, একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মলুহার গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার হোসেন (কার্ড নম্বর ১০৬৭), ক্ষুদ ব্যবসায়ী মো. তারিক (কার্ড নম্বর ১১১৩), দিনমজুর ইসরাত জাহান (কার্ড নম্বর ১০৪৪), একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইলুহার গ্রামের দিনমজুর মো. মনিরুল (কার্ড নম্বর ৫৭), দিনমজুর সাহাদাত হোসেন (কার্ড নম্বর ৬১) এবং দিনমজুর মো. মজিবর (কার্ড নম্বর ৫৩)।
সুবিধা বঞ্চিত কার্ডধারীরা লিখিত অভিযোগে উেেল্লখ করেছেন, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার কথা বলে ওই তিন ইউপি সদস্য ২০১৬ সালে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে তাদের নামে কার্ড তৈরি করেন। কিন্তু ২০২০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১০ টাকা কেজি দরের কোন চাল পাননি তারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার দরিদ্রদের নগদ সহায়তা দেবে খবর জানতে পেরে তারা ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করলে তাদের জানানো হয় তাদের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড রয়েছে। ওই কার্ডের বিপরীতে নিয়মিত চালও উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে তাদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
বিষয়টি জানাজানি হলে ইউপি সদস্য আবুল কালাম অভিযোগকারীদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের ৩ জনের কার্ড ফেরত দেন। কার্ডগুলোতে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে মোট ১৭ বার স্বাক্ষর জাল করে প্রতিটি কার্ডের মাধ্যমে ৩০ কেজি করে ৫১০ কেজি চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। ওই তিন ওয়ার্ডে ১৪ জন দরিদ্রের ৫১০ কেজি করে ৭ হাজার ১৪০ কেজি চাল উত্তোলন করে তারা আত্মসাত করেছেন।
অনিয়মের বিষয়ে জনতা বাজারে ওএমএস ডিলার মো. ইয়াছিন বলেন, ঢালাওভাবে চাল না দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। যে কার্ড নিয়ে এসেছে তাকে চাল দেওয়া হয়েছে। যাদের কার্ড হারিয়েছে তাদের চালও কেউ না কেউ উত্তোলন করেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ ও স্থানীয় রব আমীন একবার ১২ জনের কার্ডের চাল উত্তোলন করেছেন।
দরিদ্রদের চাল উত্তোলনের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ ও স্থানীয় রব আমীন।
চাল আত্মসাতের বিষয়ে ইলুহার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, যারা এখন অভিযোগ করছেন তাদের বিগত দিনে কার্ডের মাধ্যমে চাল নিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু তারা চাল উত্তোলন করেনি।
বানরীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান, একটি লিখত অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।