বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ,সন্তান হোক বাবার প্রতিচ্ছবি

দুটি অক্ষরের ছোট্ট শব্দ বাবা। এই শব্দের বিশ্লেষণ করতে গেলে ব্যঞ্জনবর্ণ এবং স্বরবর্ণের সমস্ত অক্ষর কয়েক সহস্রবার ব্যবহার করলেও এর বিশালতাকে বোঝানো সম্ভব হবে না। বাবা মানে আব্দার, বাবা মানে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আধার। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর আরেক নাম বাবা। নিজের কষ্টকে বুকে চেপে রেখে সন্তানের মুখের হাসি দেখা ব্যক্তি হচ্ছেন বাবা। নয় মাস মায়ের গর্ভে তিল তিল রক্ত-মাংস দিয়ে গড়ে ওঠা সন্তানের পরিচয়ের আরেক নাম বাবা।
মায়ের সঙ্গে সমান অংশিজন হয়ে সন্তানের সাফল্য কামনা করার নাম বাব। বাবার উপমা এরকম এক দুই বাক্যে বলে শেষ করা যাবে না। আজ বিম। বিশ্ব বাবা দিবসে বিশ্বের সকল বাবাদের জন্য শ্রদ্ধা। সন্তান যেন হয়ে ওঠে বাবাদের প্রতিচ্ছবি, এমন প্রত্যাশা সন্তানদের কাছে। ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।’ আজকের শিশু আগামীর বাবা। আগামীর দেশের কা-ারী। আগামীর বাবাদের গড়ে তুলতে নিরন্তর যে প্রচেষ্টা সেটাই বাবা। এই বাবাদের স্বপ্ন সন্তান লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। মানুষের কাজে লাগবে, দেশের কাজে লাগবে। সেই সন্তান মানুষের মতো মানুষ না হলে বাবার যন্ত্রণা বেড়ে যায় রক্ত-ঘাম ঝরানো কষ্টের চেয়ে বহুগুণ।
সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখতে নিরন্ত চেষ্টা বাবাদের কাবু করতে পারে না। বিড়ি কারখানায় বাবার বুক ঝাজরা হয়ে যায় তামাকের গন্ধে। ফুঁসফুঁস নিস্তেজ হওয়ার অবস্থা হয়। তারপরও বাবা অবিরাম তামাকের সঙ্গে চলে। কন্যাকে ডাক্তার করার প্রবাল ইচ্ছা বাবাকে আরো দৃঢ় করে। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে সন্তানের সামনে চলার পথ নির্মাণ করে চলে বাবা। করাতকলের গুড়া নাক বন্ধ করে দেয় বাবার। দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তবুও বাবা থামে না। সন্তানের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে রিকশার প্যাডেলে অবিরাম পা চালিয়ে বাবাদের দিন কাটে। কখনো আবার দিনমজুরী করে। সন্তানকে আরো একটু ভালো রাখতে অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলে। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে বড় শহরে পাঠিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেন বাবা। এতা কষ্ট সহ্য করা বাবারা সন্তানের কাছে কিছু দাবি করেন না। তাদের রক্ত-ঘামে সন্তান যেন ভালো থাকে এটাই তাদের একমাত্র কামনা। এই নিরন্ত কষ্ট সহ্য করে চলা বাবাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বের সব দেশে বাবা দিবস পালিত হবে। বাবারা ৩৬৫ দিন ৮ হাজার ৭৬০ ঘন্টা সন্তানের মঙ্গলের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন। তঁদের জন্য একটি দিন ২৪ ঘন্টা বরাদ্দ করে দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না।
বাবাদের ঋণ কোন কিছুর বিনিময় পূরণ করা সম্ভব নয়। বাবাদের ধারণ করতে হবে সন্তানদের মাঝে। যেন আগামীর বাবা হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের যোগ্য কান্ডারী হতে পারে আজকের সন্তান। বিশ্ব বাবা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা সন্তানরা যেন বাবাদের লুকানো এবং না বলা কষ্টটা বুঝতে পারে। বাবাদের চাওয়া অতি সামান্য। সন্তান যেন বাবাদের কষ্টের কারণ না হয়। সন্তান যেন সব সময় তাদের পাশে থাকে। তারা যেন কোন কারণে দূরে সরিয়ে না দেয়। বাবাদের এই ছোট্ট চাওয়া পূরণ করতে সন্তানরা যেন আরো সংবেদনশীল হয়। বাবাদের কোন কারণে যেন বৃদ্ধাশ্রম শেষ আশ্রয় না হয়। সন্তান-বাবা-মা পাশাপাশি থেকে আজন্ম চলুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সন্তান হোক বাবাদের প্রতিচ্ছবি।