বিজয় পতাকা উড্ডীন রাখুন

বিজয় পতাকা উড্ডীন রাখুন


‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি...’। 

বাঙালি জাতির যতোগুলো অর্জন তার মধ্যে অনন্য হচ্ছে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় অর্জন। যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই মাসেই আমরা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র পেয়েছি। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ এক গৌরবের ইতিহাসের নাম। নয় মাস শসস্ত্র সংগ্রামে আত্মাহুতি হিয়েছে বীর বাঙালি। ৩০ লাখের বেশি শহীদ এবং দুই লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছে এই বিজয়। সেজন্যই আমরা বলতে পারি, ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়’। সেই বাংলার সবুজ ক্যানভাস আমাদের আত্ম পরিচয়। পৃথিবীর সব দেশের পতাকাকে আমরা সম্মান করবো। আর আমার পতাকার মর্যাদা আরও আরও উচ্চে তুলে ধরবো। কারণ আমার পতাকার সঙ্গে মিশে আছে শহীদের রাল রক্তে ভেজা মায়ের সবুজ আঁচল। সেই আঁচল আজ আমাদের জাতির পরিচয়। তাই সবার আগে আমার পতাকার মর্যাদা দিতে হবে। তারপর অন্য দেশের।

বিশ^কাপ ফুটবল উন্মাদনায় ভাসছে গোটা বিশ^। সেই উন্মাদনা বাংলাদেশেও বইছে জোরেসোরে। বিশ^কাপ ফুটবল কিংবা ক্রিকেট আয়োজন হলে সবার দৃষ্টি সেদিকে থাকবে এমনটা স্বাভাবিক। কেউ কেউ বলছেন, গোটা বিশ^কে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করছে ফুটবল বিশ^কাপ। বাস্তবে যদি সেটা হতো তাহলে আমাদের মতো অনেকেই খুশি হতো। বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। অন্তত বাংলাদেশে তো নয়-ই।

বিশ^কাপ ফুটবলের এই উন্মাদনা আমাদের সবকিছুকে বদলে দিচ্ছে। সম্পর্কে চির ধরাচ্ছে। সমর্থকদের উন্মাদনায় কাঁপছে দেশ। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে অনেকে। হামলা, মারধর এমনিক হত্যা পর্যন্ত করছে এক দলের সমর্থক অন্য দলের সমর্থকদের। কারো কারো বাড়ির ছাদে শোভা পাচ্ছে ৩২ দেশের পতাকা। কোন কোন বাড়ির রং পরিবর্তন হয়েছে পছন্দের দেশের খেলোয়াড়ের জার্সিতে। অথচ আমরা অনেকে জানি-ই না সমর্থন করা দেশের সংস্কৃতি আর আমাদের দেেেশর সংস্কৃতির পার্থক্য। কেবল অন্ধের মতো সমর্থক হয়ে যাচ্ছি। তাতেও কোন দোষের নয়। খেলার সমর্থনের মধ্যে সবকিছু খুঁজে দেখার দরকারও পরে না হয়ত। কিন্তু  এই উন্মাদনায় আমরা আমাদের অস্তিত্বকে বিলিন করে দিচ্ছি কি না সেদিকে নজর দেওয়া জরুরী। ৩২ দেশের পতাকা উড়লেও আমার লাল-সবুজের পতাকা সেখানে স্থান পাচ্ছে কি না। অন্যের পতাকার সম্মান দেখাতে গিয়ে আমার পতাকাকে অবমাননা করা হচ্ছে কি না সেটাও দেখা দরকার। তা না হলে আমাদের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। আর সেই সুযোগ খুঁজছে কিন্তু একটা গোষ্ঠী। তাই এখনই সতর্ক হওয়া দরকার। ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি...’। শ্যামল ছায়া ঘেরা বাংলা মায়ের মুখ উজ্জল রাখতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছেলেবেলা গল্পে লিখেছেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনী, তারপর ইংরেজি শিক্ষার গোড়াপত্তন...’ রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির মানে হচ্ছে আগে আমার মাতৃভূমির মর্যাদা। তারপর সারা বিশে^র সঙ্গে পরিচয় ও চেনা জানা হওয়া উচিত। আমাদের গর্ব ও অহংকারের মাস ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই বিজয়ের দিনে সবার প্রতি আহ্বান আমাদের জাতীয় পতাকার সম্মান ও মর্যাদা অটুট রাখুন। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’ এই বাণী ধারণ ও বিশ^াস করুন মনে প্রাণে।
##