বিপদসীমার উপরে তিস্তার পানি

উজানের ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে ফের বিপদসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তা নদীর পানি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের নীলফামারী ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
এর আগে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলে বিকেল ৩টায় ৯ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় আরও ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চরগ্রামে সামান্য পানি প্রবেশ করলেও এখনো কোনো পরিবার পানিবন্দী হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গত দু’দিন থেকে তিস্তা নদীর উজান ভারত অংশে ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও এরপর থেকে বৃদ্ধি পায় নদীর পানি। বিকেল ৩টায় ৯ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় আরও ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরের পর থেকে বিপদসীমার নিচে নামে নদীর পানি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদী বেষ্টিত পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্বছাতনাই গ্রামসহ ছয়টি ইউনিয়নের ১০টি চরগ্রামে সন্ধ্যার দিকে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।’
একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে, সন্ধ্যার দিকে ইউনিয়নের টাবুর চর, পূর্বখড়িবাড়ী, পাগলীর বাজার, বাংলাবাজার গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ করছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব চরগ্রামের ৬০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়বে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পূর্বাভাস অনুযায়ী আর্ও ১ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে রাত থেকে নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যারাজের সব ক’টি জলকপাটন খুলে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি; তারা জানিয়েছেন কোথাও কোনো পরিবার পানিবন্দী হয়নি।
এদিকে ভারতীয় কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তিস্তার উজান ভারত অংশে গেল ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৯২ দশমিক ২ মিলিমিটার। ভারি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভারতের দোমোহনী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৮৫ দশমকি ৯৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এরপর নদীর পানি কমে বিকেল ৩টায় ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং সন্ধ্যা ৬টায় আরো কমে বর্তমানে ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে পানি কমা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৯ উজানের ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে বিপদসীমা ছাড়ায় তিস্তা নদীর পানি। ওইদিন দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি হয়।
এতে নদীর তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১৫টি চরগ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।