বরিশাল মহানগরের একমাত্র বিবিকে চেনেন না এমন নাগরিক খুব একটা পাওয়া যাবে না। বিবির পরিচিতি আজ বরিশালের গ-ি ছাড়িয়ে দেশদেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। বরিশালের বাইরের অনেক পর্যটক এসে বিবিকে দেখে এখনো মুগ্ধ হন। তারা বিবির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু বিবির পরিচয় দিতে গিয়ে সেরকম তথ্য দিতে পারি না।
বরিশালের পরিচিত মুখ বিবি এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বিবির সৌন্দর্যের ওপর বারবার কালো নখের থাবা পড়ছে। যখনই বিবি একটু একটু করে তাঁর সৌন্দর্যে সকলকে আকৃষ্ট করতে চায়, তখনই লোভের আগুনে পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হয় কেউ কেউ। মানুষের ওই লোভ বিবির মুখের ওপর কালো পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়। তাই বিবি প্রতিনিয়ত রোদন করলেও আমরা তাঁর কান্নার শব্দ শুনতে পাই না। বিবির এই কান্না কে থামাবে?
আমাদের বিবিকে গলাটিপে হত্যারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বেশিদিন আগের কথা নয়, মজিবর রহমান সরোয়ার তখন সিটি করপোরেশনের মেয়র। তিনি বিবির বুকে মাটিচাপা দিতে উদ্যত হন। সেদিন বরিশালের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে গণমাধ্যম তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সেই প্রতিবাদের মুখে রক্ষা পায় বিবি। এরপর বিবির রূপবৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য বাড়তে থাকে। মানুষ বিবির রূপে মুগ্ধ হতে থাকে।
পরবর্তী সময় শওকত হোসেন হিরণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিবির সৌন্দর্য স্থায়ী করতে বিশেষ উদ্যোগ নেন। তখন বিবির চারদিকে সৌন্দর্যের আঁচল বিছিয়ে দেন তিনি। লাল-নীল বাতির সঙ্গে পানির ঝর্ণা ধারায় বিবির সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে যায়। তখন থেকে বিবি সব বয়সের মানুষকে তাঁর রূপসৌন্দর্যে আরো কাছে টানতে শুরু করে।
আমাদের বিবির পরিচিতি যেটুকু জানা যায়, একজন ধর্ম যাযক উলিয়াম জন কেরির পালিত নাতনী জ্যানেট বিবি ওরফে জান্নাত বিবি। এই জ্যানেট বিবি ওরফে জান্না বিবির নামেই আমাদের সৌন্দর্য ম-িত বিবির পুকুর। এক সময় নগরবাসীর পানীয় জলের অভাব পূরণের জন্য খনন করা হয় এই পুকুর। সেই বিবি আমাদের ইতিহাস হয়ে আছে। বরিশাল মহানগরের ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে আমাদের বিবি।
আমাদের সেই বিবির পুকুরকে ধ্বংসের জন্য কিছুটা হলেও দায়ীও তখনকার মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। কারণ তিনি তাঁর পরিষদের কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান হিরুকে বিবির পুকুরের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব দেন। তিনি দয়িত্ব নিয়ে প্রথমই শুরু করলেন মাছ চাষ। এরপরই বিবির পুকরে থাকা লাল-নীল আলোর খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রঙিন ফোয়ারাও। আর ব্যবসা করে চলেন কাউন্সিলর হিরু। কিন্তু এব্যাপারে তখন মেয়র আর কোন উদ্যোগ নেননি।
পরে আরেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল দায়িত্ব নেওয়ার পরও ওই কাউন্সিলরই মাছ চাষের নামে বিবির পুকুর ধ্বংসে তার দায়িত্ব পালন করেন। তখন বিবিকে ঢেকে দেওয়া হয় নানা বর্ণের বিলবোর্ড দিয়ে। পরে অবশ্য বিলবোর্ডে ঢাকা বিবির সৌন্দর্য সবার জন্য উন্মুক্ত করতে উদ্যোগ নেন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আজও শুনলাম কাউন্সলর হিরু বিবির পুকুর সৌন্দর্যের দায়িত্বে এখনো আছেন। এরকম সৌন্দর্য রক্ষা হলে কি বিবি বাঁচবে? অবশ্যই বাঁচবে না। বিবিকে বাঁচাতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। মাননীয় মেয়র সেই উদ্যোগ নিন।
গতকাল রাতে বিবির পুকুরের মাছ মরে গোটা এলাকা গন্ধে ভরে গেছে। বিবির পুকুরের পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্রুত পানি পরিবর্তন করা জরুরী। বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন বিবির সৌন্দর্য রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন কিছু মানুষের অশুভ চিন্তার কারণে বিবির আজকের এই দশা হয়েছে। সেখান থেকে বিবিকে উদ্ধার করবেন তিনি।
আমরা বলতে চাই, বিবিকে কলুশিত করা কিংবা তাঁর সৌন্দর্য নষ্ট করতে যারা কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যারা বিবির সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব নিল, তারা তো বিবির বুকে ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছেন। মাছ চাষের নামে কেবল ব্যক্তিগত ব্যবসা ফেঁদেছেন। মাননীয় মেয়র আমাদের বিশ^াস আপনার হাতের ছোঁয়ায় বিবি আবারো তাঁর হারানো রূপবৈচিত্র্য ফিরে পাবে। কিন্তু যারা বিবির সুন্দর মুখে কালির আঁচর দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিন।