বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা মেয়েদের কান্না হয়ে ঝরেছে

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা মেয়েদের কান্না হয়ে ঝরেছে

সংযুক্ত আরব আমিরাত আগেই বুঝে গেছে, টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচটি তাদের জন্য কেবল নিয়ম রক্ষার। স্বাগতিক বাংলাদেশ জানতো সেমিফাইনালে যেতে মঙ্গলবার তাদের জয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণ মঙ্গলবার সকালেও অব্যাহত ছিল। কিন্তু নিগার সুলতানারা কি ভাবতে পেরেছিলেন, আগের দিন হাত ফসকে যাওয়া জয়ের পর এই বৃষ্টিই আবার দু’চোখে অঝোর ধারার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।     

প্রবল বর্ষণে আমিরাতের মেয়েরা যেখানে বৃষ্টিবিলাস করেছে, বাংলাদেশের মেয়েরা প্রার্থনায় ছিলেন ম্যাচটা যেন হয়। কিন্তু ভাগ্যদেবী মনে হয় এদিন বাংলাদেশের কথা শুনবে না বলেই পণ করেছিলেন। সে কারণেই কিনা বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা মেয়েদের কান্না হয়ে ঝরেছে শেষ পর্যন্ত! আম্পায়ার ম্যাচটি বাতিল ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেসিংরুমে কান্নার রোল উঠেছিল! অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে তো কেউ সান্ত্বনাই দিতে পারছিলেন না। বিষাদময় দিনটিতে মানসিক অবস্থাও স্বাভাবিক থাকার কথা নয়। তাই ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি কেউ। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেও বলা হয়েছে, দলের কেউ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। 

অথচ প্রকৃতির কি অদ্ভুত খেয়াল। কান্নার রোল শেষে মেয়েরা যখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেন, তখনই বদলে যেতে থাকে আকাশের চিত্র। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মেঘ থাকলেও বৃষ্টি কমে যেতে থাকে। অল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রাউন্ডসম্যানরাও প্রস্তুত করে ফেলেন মাঠ। আধাঘণ্টা বিলম্বে দুপুর ২টায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিও মাঠে গড়ায় ঠিকমতো। কিন্তু আক্ষেপ হয়ে থাকলো এদিন মাঠে গড়ালো না বাংলাদেশ-আরব আমিরাতের ম্যাচ। 

সাড়ে ১১টায় ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা আসার পর গণমাধ্যম বাংলাদেশি মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে প্রথমে প্রেস কনফারেন্স রুমে; পরে স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে। বেলা একটার কিছু আগে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসেন নিগার-জাহানারারা। তার আগে আরব আমিরাতের মেয়েরা স্টেডিয়াম থেকে বিদায় নেন। যাওয়ার আগে তারা হাসিমুখেই ফটোসেশন করেছেন। ৬ ম্যাচে তিন পয়েন্ট পাওয়া আরব আমিরাতের হারানোর কিছু ছিল না। ফলে বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলেও তাদের মধ্যে প্রভাব ছিল না কোনও।

বিপরীতে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ছিল বিষাদের ছায়া। বেলা একটার আগে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে মেয়েরা মাথা নিচু করে সোজা গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কেউ কারও সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। এশিয়া কাপের ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে সবার শেষে গাড়িতে উঠেছেন তিনি।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন এই জ্যোতির কণ্ঠেই ছিল তুমুল আত্মবিশ্বাস। নিজেদের মাঠ, সিলেটের চেনা উইকেটে সাফল্য পাওয়াকে খুব কঠিন মনে করছিলেন না। স্বাভাবিকভাবেই এমন ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিতই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে।

২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই চলাকালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় টুর্নামেন্টটি বাতিল হয়ে যায়। থাইল্যান্ড ওই বাছাই পর্বে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দারুণ অবস্থানে ছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দল হিসেবে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিগার সুলতানার দল। অথচ টুর্নামেন্টটি বাতিল না হলে থাইল্যান্ডই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেতো। বলা যায় এবার সেই নিয়তি দৃশ্যপটে হাজির। থাইল্যান্ড হয়তো টিম হোটেলে বসে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ওই সময়টার কথাই ভাবছিল। তিন দলকে হারিয়েও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটি টুর্নামেন্ট বাদ হওয়ায় পরে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেছে। সেই দলটি এবার যোগ্যতার সঙ্গে প্রথমবার বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো ভাগ্যের ছোঁয়াতেও! এশিয়া কাপে সহযোগী দুই দেশের সঙ্গে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে শেষ চারে তারা। নিয়তি বোধহয় একেই বলে!