ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর-জলাশয় রক্ষায় ঐতিহাসিক রায়

সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এলাকায় থাকা কোন পুকুর জলাশয় ভরাট করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের আদেশ রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন,২০০০ এর ধারা ২(চ) অনুসারে ব্যক্তিগত পুকুরও প্রাকৃতিক জলাধার-এর অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে।
ওই রায়ে আগামি ১ বছরের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডিয় পুকুরগুলি জলাধার আইন ২০০০ এর ধারা ২(চ) এ উল্লেখিত প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত হিসেব গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (ঐজচই) ২০১২ সালে বরিশাল শহরের ঝাউতলা এলাকায় প্রায় শতবর্ষি একটি পুকুর ভরাট ও দখল বন্ধে রীট পিটিশন দায়ের করলে ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রুল জারি করে হাইকোর্ট স্থিতিবস্থার আদেশ দেন।
এবছর ৫ মার্চ রুল শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এর আদালত রায় প্রদান করে রুল এ্যাবসলিউড করেন এবং পুকুরটির সীমানা বেআইনীভাবে অতিক্রম ও মাটিদ্বারা ভরাট করা থেকে বিরত থাকা এবং পুকুরটি রীতিমত সংস্কার ও নিরাপদ পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
আদালত রায়ে বলেন, প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুধাবন করে এ আইনটি প্রণয়ন করেছেন এবং এই আইনের ২(চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধার এর আওতায় মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার মাষ্টার প্লান চিহ্নিত নদী, খাল, বিল, দীঘি, ঝর্ণা বা জলাশয় অথবা সরকার, স্থানীয় সরকার বা কোন সংস্থা কর্তৃক, সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসাবে ঘোষিত প্রাকৃতিক জলাধারা এর আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া সলল পানি এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে এমন কোন ভূমিও উক্ত প্রাকৃতিক জলাধারের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোন পুকুরকে উক্ত সংজ্ঞা থেকে বাদ দেয়া হয়নি বরং ইহা উক্ত আইনের ২(চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, মহানগরী ও বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তি মালিকাধীন হিসেবে রেকর্ডীয় পুকুরগুলিকে অত্র রায় প্রাপ্তির পরবর্তী ১ (এক) বছরের মধ্যে আইন,২০০০ এর ধারা ২(চ) এ উল্লেখিত প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত হিসেবে গেজেটভুক্ত করে প্রকাশ করার জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রনালয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয় গেল।
রুল শুনানিতে বাদি পক্ষের কৌশুলি অ্যাডেভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতকে জানান, পরিবেশ আইন ১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর বিধান অনুসারে যে কোন জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সুতরং ওই পুকুরও ভরাট করা যাবে না। বিবাদি পক্ষের আইনজীবি বলেন যে, পুকুরটি ব্যক্তিগত মালিকাধীন এবং মহানগরের মাষ্টারপ্লান অন্তর্ভুক্ত নয় সুতরং আইনটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি আরও বলেন যে, বরিশালের দেওয়ানি আদালতে মামলা চলমান আছে সুতরং রীট পিটিশন রক্ষ্যণীয় নয়। আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টকরণের জন্য রীট মামলায় এ্যটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সিনিয়র এডভোকেট প্রবীর নিয়োগীকে শোনেন আদালত।
অ্যাডেভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতের বরাত দিয়ে বলেন, আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, বিদ্যমান সকল পৌর এলাকার মত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে বর্তমান পৌরসভা বিহীন প্রত্যেকটি উপজেলা সদর এলাকা ও থানা সদর এলাকাকে সুনিদিষ্টভাবে চিহ্নিত করে ওই সকল উপজেলা সদর ও থানা সদরকে আইন, ২০০০ এ অর্ন্তভুক্ত করা আবশ্যক। সেমতে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
তিনি আরও জানান, হাইকোর্টের উক্ত রায়ের পুর্নাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে। যার কপি হাতে পেয়েছেন তিনি।
ওই রীটের বাদী পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মনজিল মোরসেদ এবং বিবাদি পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান। সরকার পক্ষে ছিলেন ডিএজি অমিত তালুকদার।