ভালোবাসার অর্থী

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবসটির নানা আয়োজন আমাদের দেশসহ গোটা বিশ্ববাসীর কাছেই উপভোগ্য। বিভিন্ন আয়োজনে এ দিবস পালন নিয়ে বিভিন্ন মতামতও রয়েছে। ভালোবাসা থাকুক বা নাই থাকুক, তরুণ প্রজন্মের কাছে দিনটি বেশ উৎসাহের।
শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সর্বত্রই ভালোবাসা বিরাজমান। কথায়, গানে, সুরে, কবিতায় ভালোবাসার জয়জয়কার চিরন্তন। তবে, এ ভালোবাসা যে কেবল নারী-পুরুষের তেমনটা নয়। কেউ কেউ আবার গভীরভাবে মজেছেন ঈশ্বরের প্রেমেও। আর সেই অনুভব থেকেও সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য সাহিত্যকর্ম। উর্দু কবি মির্জা গালিব যেভাবে প্রেমকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন,
‘বেঁচে থাকা আর মরণ সমান
প্রেম হলো সেই ফাঁসি বাঁচি যার তরে, তার লাগি মরি
এমনই অবিশ্বাসী।’ [কাব্যানুবাদ: বুলবুল সরওয়ার]
অর্থাৎ প্রেম, ভালোবাসা নিয়মের বেড়াজাল ভাঙতে দ্বিধা করে না। বরং নিরন্তর সাধনায় আরও বেশি পরিশুদ্ধ হতে থাকে এই অনুভূতি।
এই সাধনার কাছে এসে চাওয়া-পাওয়া, জয়-পরাজয় থেকে শুরু করে যাবতীয় দ্বন্দ্ব হার মানে। যারা ভালোবাসার অর্থী বা পূজারী, তাদের কাছে ভালোবাসাই মূখ্য। তবুও হিসেব নিকেশ, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির লড়াইয়ে প্রাণ হারায় অনেক উদ্যমী ভালোবাসা। কিন্তু তাতে কখনো হারায় না ভালোবাসার মাহাত্ম্য। ভালোবাসা আরাধণাযোগ্য। সাধনা ও প্রার্থনা ভালোবাসারই ভিন্ন দুটি নাম।
পৃথিবীটা কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয় যে, প্রিয়জনকে হারিয়ে নিজে জিতে গেলে, এমনটা ভেবে স্বস্তি পাওয়া যায়। বরং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে জিতিয়ে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসতে পারার নামই- ভালোবাসা। জীবন তো নদীর মতো। তার বাঁকে বাঁকে ভাঙন থাকবেই। তাই বলে ভাঙনের ভয়ে ভালবাসাকে এড়িয়ে যেতে নেই। বরং ভালোবাসা দিয়েই গড়তে হয় আপন দেবালয়। স্রষ্টার সাধনায় যেমন মোহের কোনো স্থান নেই, তেমনি প্রত্যাশার মোহ থাকলে তা কখনোই ভালবাসা নয়। এখানে একমাত্র প্রাপ্তিই স্বস্তি। কোন জয় পরাজয়ের মাপকাঠিতে ভালবাসা পরিমাপ করা যায় না। ভালবাসতে পারাটাই একমাত্র জয়।
এছাড়া যাবতীয় লড়াই ভালোবাসার কাছে তুচ্ছ, গুরুত্বহীন। পাওয়া, না পাওয়ার হিসেব প্রার্থনাকারীকে করতে নেই। তার কাজ কেবলই প্রার্থনা। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস আত্মার শান্তি খুঁজে পেয়েছেন প্রার্থনায়। কিন্তু তার নিরন্তর সাধনায় তিনি ঈশ্বরের থেকে কোন বিনিময় চাননি। ভালোবাসারও কোন বিনিময় মূল্য নেই। তাই কি পেয়েছি, কি পাইনি সে হিসেব করে ভালোবাসার মানুষের অমর্যাদা করা ঠিক না।
ভালোবাসার অর্থী'রা কখনো তা করে না। ভালোবাসা পাওয়া এবং দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠী ভালবাসা। অর্থাৎ ভালোবাসা তাকেই দেওয়া উচিত যার হৃদয়ের পুরোটাই ভালোবাসা দিয়ে ভরপুর। অন্য কিছুর সঙ্গে তার তুলনা করলে ভালবাসা ঠুনকো হয়ে যায়। কিন্তু জাগতিক সুখ নামক অসুখের মোহে ভালোবাসতেই ভুলে যায় অনেকে। ক’জনই বা পারে রবি ঠাকুরের মত ‘আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী’ -এমন প্রতিশ্রুতি দিতে!
তাই আসুন, আজকের দিনটিতে কথা বলি ভালোবাসার, উপলব্ধি করি, অনুভব করি ভালোবাসার মাহাত্ম্য। ভালোবাসার আলোয় বিলীন হোক যাবতীয় অসুন্দর। ভালোবাসার আরাধনায় আমরা হই ‘ভালোবাসার অর্থী’।