ভোরের আলো তারুন্য নির্ভর খবরের কাগজ। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ নিয়ে ব্যতিক্রমী কর্মশালা করে তারা নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করেছে। ভোরের আলো এই তারুণ্যই খবর দিয়ে আলো ছড়াতে পারবে।
ভোরের আলোর দুই দিনের কর্মশালার শেষ দিনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান এবং বিভিন্ন পর্বে প্রশিক্ষকরা এসব কথা বলেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের সনদপত্র তুলে দেন সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।
শুক্রবার সকাল ১০টায় কর্মশালায় সহায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র নিউজ এডিটর মজুমদার জুয়েল। কর্মশালার শুরুতে তিনি বলেন, কোন আঞ্চলিক দৈনিকের পক্ষ থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে কর্মশালা করার নজির আমাদের তেমন জানা নেই। নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই তরুণরা সাংবাদিকতায় প্রবেশের আগেই সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। ওরা অবশ্যই নীতি নৈতিকতা মেনে সংবাদপত্র শিল্পকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে। ওই নেতিবাচক সাংবাদিকতা থেকে দূরে থাকবে। দৈনিক ভোরের আলোর এই উদ্যোগ চালু থাকলে ভবিষ্যতে এটাই মাইলফলক হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, ‘আমি কেবল তরুণ একঝাঁক সংবাদকর্মী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শুনে এই অনুষ্ঠানে চলে এসেছি। এখানে এসে অভিভূত হয়েছি। ভোরের আলোর আহ্বান তোমার হাতের লেখায় রাঙাবো আমাদের কাগজ। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এরকম আহ্বান সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’
তিনি বলেন, সাংবাদিকতা নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু আজকের যে তরুণরা সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি দিয়েছে তাদের নিয়ে সেই প্রশ্ন উঠবে না। তারা নেতিবাচক দিক পরিহার করে সঠিক সাংবাদিকতা করবে এটা বিশ্বাস করতে চাই। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষে কাজ করে চলেছে। সেই কাজেও সাংবাদিকরা সহযোগী। আমরা চাই, ভোরের আলো তরুণদের নিয় যে উদ্যোগ নিয়েছে সেই উদ্যোগ বাংলাদেশে নতুন ধারা সৃষ্টি করবে। এই তরুণরা বাংলাদেশকে আলোকিত করবে।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, বরিশালে আঞ্চলিক দৈনিকের সংখ্যা অনেক। এসব পত্রিকায় অনেক সংবাদকর্মী কাজ করেন। কিন্তু কোন আঞ্চলিক দৈনিক তরুণদের নিয়ে সাংবাদিকতার কর্মশালা করেছে এমন শুনিনি। ভোরের আলো সেই স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের এই ভালো উদ্যোগ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তবে, বরিশাল নগরে সাংবাদিকতায় অনেকেই নীতি নৈতিকতা মানেন না। অনেকটা বেপরোয়াভাবে সাংবাদিকতা করেন। অনেক পত্রিকা আছে যাদের সংবাদকর্মীদের পরিচয় জানা কঠিন হয়ে পরে। অথচ ওইসব সংবাদকর্মীরা যেকোন অনুষ্ঠানে আসেন। তাদের বুঝে উঠতে আয়োজকদের সমস্যা হয়। এরা কেবল কার্ড নিয়ে সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে। এইসব সাংবাদিকদের কারণে ভালো মানের সাংবাদিকরাও বিতর্কের মুখে পড়েন। কার্ডধারী ওইসব সাংবাদিকদের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হিমশিম খায়। সাংবাদিকতায় এই নেতিবাচক দিক পরিবর্তন করতে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
দৈনিক কালের কণ্ঠ’র ডেপুটি চিফ রিপোর্টার তৌফিক মারুফ বলেন, আমরা সাংবাদিকতা শুরুর পরে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। কিন্তু আজ ভোরের আলোর উদ্যোগে যারা সাংবাদিকতা পেশায় আসতে আগ্রহী তারা প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। এটা একটা আশার দিক। বরিশালে অনেকগুলো খবরের কাগজ রয়েছে। তারা কে কি করছে সেই খবর হয়তো আমাদের কাছে নেই। কিন্তু আমরা মনে করি সংখ্যায় বড় হওয়া নয়, কোয়ালিটির দিকে লক্ষ্য রাখা দরাকার। ভোরের আলো কতজন কর্মী কাজ করছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে তারা কোয়ালিটি নিশ্চয়তা দিতে পারছে কি না। সেটা দেখতে হবে। আগামীতে ভোরের আলো বরিশালে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবে।
বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, বরিশালে এর আগে কোন আঞ্চলিক দৈনিক তরুনদের নিয়ে এরকম কর্মশালা করেনি। এটাই প্রথম উদ্যোগ। যে উদ্যোগ নিয়েছে ভোরের আলো। আমরা ভোরের আলো, মতবাদ এবং দখিনের মুখ একটি পরিবার হয়ে কাজ করার চেষ্টা শুরু করেছি। আজকের যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা আমাদের কাগজে কাজ করলে আমাদের কাগজের মান বৃদ্ধি পাবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অপসাংবাদিকতা দূর হবে।
ভোরের আলোর উপদেষ্টা সম্পাদক এবং ডিজেবল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (ডিডাব্লিউএফ)-এর চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণদের সামনে এগিয়ে যাবার পথ করে দিতে হবে। ভোরের আলোর এই উদ্যোগ তার একটি অংশ। আমরা সঠিক তথ্য দিয়ে আমাদের কাগজ পাঠকের হাতে তুলে দিতে চাই। ভোরের আলো নীতি নৈতিকতা মেনে সাংবাদিকতা করবে। আমরা চাই, ভোরের আলো পরিবার সকল প্রভাবের উর্ধ্বে উঠে যেন সংবাদ পরিবেশন করতে পারে। সেজন্য রাজনৈতিক দল, মন্ত্রী, সাংসদ, জেলা প্রশাসসহ নাগরিকদের সহযোগী হয়ে পাশে থাকতে হবে।
দুইদিনের কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থেকে খবরের আদ্যপান্ত নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র নিউজ এডিটর মজুমদার জুয়েল, খবরের পেছনের খবর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন দৈনিক কালের কণ্ঠ’র ডেপুটি চিফ রিপোর্টার তৌফিক মারুফ, কেন মানুষ সংবাদ পড়েেব? সংবাদে নান্দনিকতা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন সময় টেলিভিমন বরিশাল ব্যুরো প্রধান ফিরদাউস সোহাগ এবং সংবাদের বিষয় নির্বাচন, অনুসন্ধানী সংবাদ, শিশু ও নারী সাংবাদিকতার ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরে প্রশিক্ষণ দেন ভোরের আলোর সম্পাদক।
কর্মশালায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রজমোহন কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়সহ বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানসহ অন্য অতিথিরা।
কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, ভোরের আলোর বার্তা সম্পাদক তন্ময় কুমার নাথ, ভোরের আলোর এডমিন সুকান্ত হাওলাদার অপি, ইভেন্ট মেনেজমেন্ট রিয়াদ মাহমুদ, কার্যসহকারী অভিজিৎ।
What's Your Reaction?






