মঠবাড়িয়ায় জোয়ার ও অতিবর্ষণে বিদ্যালয় জলমগ্ন

মঠবাড়িয়ায় জোয়ার ও অতিবর্ষণে বিদ্যালয় জলমগ্ন

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় গত বেশ কয়েকদিন ধরে বর্ষণ সাথে বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের প্রভাবে অতি জোয়ারে উপকূলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখাযায় অব্যাহত বর্ষণে উপজেলার দাউদখালী নূরজাহান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি জলমগ্ন হয়ে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। বিদ্যালয়ের মাঠঘাট শুধু নয় জলের প্লাবন ঢুকে পড়েছে শ্রেণি কক্ষেও। ফলে গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে জলমগ্ন শ্রেণি কক্ষে বসতে না পেরে জলকাঁদা ভেঙে বাড়ি ফিরে গেছে।

ওই বিদ্যালয়ের ভূক্তভোগী দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার বলেন, এক কিলোমিটার দূর থেকে বেহাল সড়কের জলকাঁদা ভেঙ্গে স্কুলে গিয়ে দেখি স্কুলের মাঠ ডুবে গেছে। শ্রেণি কক্ষে ঢুকে দেখি শ্রেণি কক্ষ জল কাঁদায় পরিপূর্ণ। এমন অবস্থায় ক্লাস না করেই নৌকায় চড়ে বাড়ি ফিরেছি। আমাদের নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ জরুরী।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শুভ চন্দ্র শীল বলেন, আমাদের স্কুলটি এমনিতেই জ্বরাজীর্ণ টিনশেড ভবন। অতি জোয়ার ও অতিবর্ষণে বিদ্যালয়ের মাঠঘাট ডুবে যায়। তখন শ্রেণিকক্ষও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আমাদের পাঠদান ব্যাহত হয়। নতুন পাকা স্কুল ভবন নির্মাণের দাবি জানাই।

বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে , দুই একর ৫৪ শতাংশ জমি জুড়ে ১৯৯০ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অবসরপ্রাপ্ত প্রয়াত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয়। টিনশেড ভবনে ৮টি শ্রেণি কক্ষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়টি নিচু জমিতে হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। বিদ্যালয় দ্বিতীয় দফায় বিধ্বস্ত। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়টি সংস্কারে কোনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এমন অবস্থায় ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিদ্যালয়টি বিধ্বস্ত হয়। পরে ২০২০ সালের আম্ফানের ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় শিক্ষক ও স্থানীয় গ্রামবাসি মিলে বিদ্যালয়টি স্ংস্কার করে পাঠদান চালু রাখেন।

বর্তমানে জ্বরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি অতি জোয়ারের প্লাবন ও অবিরাম বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের সম্মূখ মাঠ মাটি ভরাট না থাকায় পানি শ্রেণি কক্ষে ঢুকে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার রাস্তাটি গত দুই বছর ধরে ঠিকাদার মাটি খুড়ে ফেলে রেখেছে। সড়কটি পাকা করণের কাজও স্থগিত। এমন অবস্থায় গ্রামবাসি ও শিক্ষার্থীদের বর্ষা মৌসুমে পাঁয়ে চলাও কষ্টকর।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেন শ্রেণিকক্ষ জলমগ্ন হয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ জলমগ্ন হয়ে শ্রেণি কক্ষে ঢুকে পড়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্ভব হয় না। বিকল্প পাঠদানেরও ব্যবস্থা নেই। একটি নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি নতুন ভবনের জন্য কর্তৃপক্ষ মাটি পরীক্ষা করে গেলেও ভবন বরাদ্দে কোনও অগ্রগতি নেই। ফলে প্রতিবছর বষার্ মৌসুমে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।

এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অলি আহাদ বলেন, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুল ও স্কুলের মাঠ জলমগ্ন হয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে অবহিত করেছেন। স্কুলটি নিচু জমিতে হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌমুসে জলমগ্ন হয়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। সেখানে নতুন পাকা স্কুল ভবন নির্মাণ ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।