মধুখালীতে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

ফরিদপুরের মধুখালীতে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২) নামে এক ব্যবসায়ীকে। এ ঘটনায় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামবাসী।
এ সময় তারা অভিযোগ করেন, গত রোজার সময় থেকে সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে মধুখালী থানার পুলিশকে বার বার জানালেও কর্ণপাত করেনি। ফলে তাদের গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনকে নির্মমভাবে খুন হতে হলো সন্ত্রাসীদের হাতে।
জানা গেছে, মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মাকরাইল গ্রামের হারুনুর রশীদ হিরু মিয়ার বড় সন্তান এই জাহাঙ্গীর হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় পার্টসের ব্যবসা করতেন। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তিনি ঢাকা থেকে নিজ গ্রাম মাকরাইলে ফিরে আসেন এবং মধুখালী বাজারে পার্টসের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। তার স্ত্রী সাজেদা মাহমুদ বিথী ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। গত বছরের ৪ নভেম্বর সাজেদা মাহমুদ বিথী মারা যান। জাহাঙ্গীর হোসেনের বড় মেয়ে মাহমুদা জাহান ভিকারুন্নেসা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল জাহান স্মৃতি একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। শাফিন মাহমুদ সামী নামে তাদের চার বছরের একটি শিশু পুত্র রয়েছে। বাবা-মা হারিয়ে এই ছোট শিশুরা মা-বাবাহারা এতিম হয়ে গেল। মায়ের পরে পিতাহারা সন্তানদের আর্তনাতে মাকরাইল গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে মারা যান জাহাঙ্গীর হোসেন। তার আগে শনিবার বিকালে মাকরাইল গ্রামের উত্তর পাড়ার রাস্তার ওপরে প্রকাশ্য দিবালোকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালিয়ে পৈচাশিকভাবে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে মৃত ভেবে ফেলে যায়। গ্রামের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলম শেখ (৩৫) নামে একজন ভ্যানচালক জানান, শনিবার দুপুর পরে তিনি জাহাঙ্গীরকে নিয়ে মধুখালী বাজার থেকে মাকরাইল গ্রামে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে মেছেড়দিয়া নামক স্থানে এলে তারা মামুনকে দেখতে পান। তাদের দেখে মামুন মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর উত্তরপাড়ায় এলে উথানের বাড়ির সামনে তাদের ওপর হামলা করে।
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মো. রবিউল ইসলাম (৪৬) নামে একজন ভ্যানচালক জানান, আলম শেখের পেছনে তিনিও ভ্যানে যাত্রী নিয়ে মাকরাইল গ্রামের দিকে আসছিলেন। উত্তরপাড়ার রাস্তায় এসে তিনি দেখতে পান ওই গ্রামের কনক, মিরান, সোহেল, রুবেল রানজু, দারু ও মিরাজ লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে প্রথমে ভ্যানচালক আলমকে একটি বাড়ি মারে। এরপর গামছা দিয়ে জাহাঙ্গীরকে বেঁধে পেটাতে থাকে তারা।
ভ্যানচালক আলমের থেকে খবর পেয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের প্রতিবেশী ও স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে রাস্তার ওপর গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নেন।
কামালদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুল বাশার বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে তার নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ওয়ালিদ মামুন। ওই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই মামুন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যার আগের দিন তারা মেছেড়দিয়ায় তার ভগ্নিপতির বাড়িতে বসে গোপন বৈঠক করে। এরপর তারা পরিকল্পিতভাবে জাহাঙ্গীর হোসেনকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, এর আগে এই ওয়ালিদ মামুন ঢাকায় ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছে, র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। এখনো সে এলাকায় তারা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসব অঘটন ঘটিয়ে চলেছে।
মধুখালী থানার ওসি তদন্ত রথীন্দ্রনাথ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চলছে। যে-ই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।