মাকে বাঁচিয়ে ফিরে এবার ছেলে করোনা আক্রান্ত

মাকে বাঁচিয়ে ফিরে এবার ছেলে করোনা আক্রান্ত

করোনা আক্রান্ত মায়ের শ্বাসকষ্ট হতে থাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে মাকে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সেই সন্তান সুস্থ মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এবার নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

জিয়াউল হাসান টিটু জানিয়েছেন, নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শনিবার তিনি এমপিজেন্ট রেপিডেন টেস্ট দিয়ে পজিটিভ পেয়েছেন। তবে তা শেষ পর্যায়ে আছে এবং তা গুরুতর কিছু নয়। এছাড়া করোনার কোনো উপসর্গও তার মধ্যে নেই বলে জানান তিনি। এছাড়া তার মা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন জানিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

তার কাছ থেকে আরো জানা যায়, নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুম্পা সিকদার একটি ছোটো আয়োজন করে তাকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ার কথা টিটু নিজেই ইউএনওকে জানানোর পরে ইউএনও তাকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। তিনি সুস্থ হলেই সংবর্ধনার আয়োজনটি সম্পন্ন করা হবে।

গত ১৭ এপ্রিল বিকেলে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সূর্যপাশা গ্রামে হোম আইসোলেশনে থাকা করোনা আক্রান্ত স্কুল শিক্ষিকা রেহানা পারভীন (৫০) এর অক্সিজেন সেচুরেশন ৭০ এর নিচে নেমে যাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। মাকে বাঁচানোর জন্য ৮ লিটার মাত্রার চলমান ২০ কেজি ওজনের অক্সিজেন সিলিন্ডার শরীরে বেঁধে মাকে মোটরসাইকেলে করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান রেহানার ছেলে কৃষি ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিটু।

মায়ের জীবন বাঁচাতে মোটর সাইকেল যোগে হাসপাতালে যাওয়ার দৃশ্যটি সেদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

বরিশাল মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে সুস্থ হয়ে ২৩ এপ্রিল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় মায়ের অক্সিজেন সেচুরেশন ৯৬ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে রেহানার তিন সন্তান মেহেদী হাসান মিঠু, জিয়াউল হাসান টিটু এবং রাকিবুল হাসান ইভান।

বাড়ি ফেরার পর জিয়াউল হাসান টিটু জানান, ডাক্তার বলেছে তার মায়ের ফিজিকেল স্ট্রেন্থ আগের অবস্থায় আসতে একটু সময় লাগবে। ফুসফুসের যে ঝামেলাটা ছিলো, ব্লেডিংয়ের একটা সমস্যা ছিলো সেগুলো এখন নেই। আবার ১৫ দিন পর চেকআপ করতে বলা হয়েছে তার মাকে। শরীরে ডায়াবেটিস ও অ্যাজমার সমস্যাটি প্রকট হওয়ায় জিয়াউল হাসান টিটুসহ পরিবারের সদস্যরা সেদিন বেশি ভয় পেয়েছিলেন।

সেদিন তারা মাকে রিজার্ভ গাড়িতে করে নিলে হয়তো তাকে আর বাঁচানো যেতো না। তখন অক্সিজেন ফল করছিলো যা সকালেও ছিলো ৯০। দুপুরে অক্সিজেন সেচুরেশন ৭০ এ চলে আসার পরে টিটু আর বিন্দু পরিমাণ সময় নেইনি। তৎক্ষণাৎ মোটরসাইকেলে করে বরিশাল পৌঁছান। ওই রাতেই তার মাকে ৬/৭টা অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া হয়েছে। এই সাপোর্ট টা না হলে তার মাকে বাঁচানো যেতো না। একেকটি সিলিন্ডার ১০ লিটারের। ওনাকে ৮ লিটার মাত্রায় দিতে হয়েছে। যা দেড়/দু ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।

জিয়াউল হাসান টিটু ও তার মা রেহানা পারভীন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, মিডিয়ার সহযোগিতা ও দেশের মানুষ প্রার্থনালয়ে যেভাবে তাদের জন্য সুস্থতা কামনা করেছে তার জন্য তারা কৃতজ্ঞ।

জিয়াউল হাসান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার বাসিন্দা। তিনি ঝালকাঠি জেলা সদরের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শাখার সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন। তার ছোট ভাই রাকিব হাসান চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে লেখাপড়া করেন। আর সবার বড়ভাই মেহেদী হাসান খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৌলতপুর থানায় উপপরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছেন।

জিয়াউল হাসানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল হাকিম মোল্লা। তিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার। ২০২০ সালের প্রথম রমজানে হাকিম মোল্লা মৃত্যুবরণ করেন। নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড সূর্যপাশা গ্রামের বাসিন্দা তারা। মা রেহানা পারভীন নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুম্পা সিকদার টিটু করোনা পজিটিভ হওয়ার বিষয়ে বলেন, আমি শুনেছি এবং ওনার সাথে কথাও হয়েছে, ওনাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছি। সুস্থ হলে আমরা ওনাকে সম্মানিত করতে চাই।