মাদক মামলায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মনির মোল্লাকে করাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মাদকের পৃর্থক দুই মামলায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মনির মোল্লাসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) জসিম উদ্দিন ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর কোতয়ালী মডেল থানার সংশ্লিষ্ট জিআরও শাখায় ওই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ওজোপাডিকো গেটের সামনে থেকে জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ৫২ পিচ ইয়াবা বড়িসহ আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওজোপাডিকোর রেষ্ট হাউসে একই কক্ষ থেকে ২০০ পিচ ইয়াবা বড়িসহ কামরুল ইসলাম ও ১০০ পিচ ইয়াবা বড়িসহ পুলিশ কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
একই সময় জাহিদের বিছানার নিচ থেকে আরো ১০০ পিচ মিলিয়ে মোট ৪৫২পিচ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় এসআই দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। তবে ঘটনার সময় মনির মোল্লা ওই স্থানে থাকলেও ডিবি পুলিশ তাকে ছড়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠে।
এমনকি অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষে রাতে অভিযানের বিষয়টি স্বীকার করে ডিবি পুলিশ। কিন্তু মনির মোল্লাকে আটক কিংবা মাদক ব্যবসার সাথে মনির মোল্লার সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগও এড়িয়ে যান এসআই দেলোয়ার হোসেন। এ নিয়ে স্থানীয় এবং জাতিয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আর তাই আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবাসহ আটক হওয়া জাহিদুল ইসলামকে আদালতে প্রেরণ করা হলে সে আদালতের কাছে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মনির মোল্লা তাকে ওজোপাডিকো রেষ্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কয়েকটি ইয়াবার চালানও আনায় মনির মোল্লা। এর মধ্যে ইয়াবা বিক্রিতে ২০ হাজার টাকা লাভ হলে ১০ হাজার টাকা তাকে দিতে হয়েছে এমন তথ্যও জানায় জাহিদ।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মনির মোল্লার সাথে মাদক ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিলো। গত বছর ২০ জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা দুজন মুঠোফোনে এক হাজার ৮৩৫ বার কথা বলেছে।
একই সময় ৬৬৯টি ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) আদান প্রদান করেন। তাছাড়া কেবল ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনির ও জাহিদের ২৪২ বার এবং ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা হতে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত মোট ২২ বার কথা হয়। এ সময়ের মধ্যে আদান প্রদান হয় ১১৮টি এসএমএস। যার বেশিরভাগই ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় ও লাভের টাকার বিষয়ে কথোপকথন।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া দুই মামলার অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত আসামীরা হচ্ছেন- বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামের মৃত শাহজাহান মুন্সির ছেলে জাহিদুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান তালুকদারের ছেলে কামরুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এসএএফ শাখার কনস্টেবল মো. সাইফুল ইসলাম সানি (কং নং-১৬৮৮)। সে বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের হলতা গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান সিরাজের ছেলে।
এছাড়া তদন্তে ও অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামীরা হলো- বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বরিশাল নগরের ২৫নং ওয়ার্ডের মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা মৃত ইছাহাক মোল্লার ছেলে জাহিদুর রহমান মনির মোল্লা, ঝালকাঠি জেলার আখরপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেক চৌধুরীর ছেলে শামীম চৌধুরী, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টাসের বাসিন্দা মাঈনুদ্দিন এর ছেলে মো. নাছির ওরফে মেল্লা নাছির, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কালিদাসিয়া গ্রামের রশিদ খানের ছেলে রূপাতলী ২৩নং ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিনের ভাড়াটিয়া নাসির খান, পশ্চিম চরকাউয়া দুই নং ওয়ার্ডের আব্দুল হক হাওলাদারের ছেলে মো. মিলন, কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের ছেলে সৈয়দ মোর্শেদুর রহমান, একই এলাকার দ্বীপশ্রীকুল গ্রামের সশাংক বড়–য়ার মেয়ে রতœা বড়ুয়া, বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের রুনশী গ্রামের চেরাগ আলী হাওলাদারের ছেলে আজিজুল হক, ঝালকাঠি জেলা সদরের বাসিন্দা জামাল হাওলাদারের স্ত্রী রেকছোনা বেগম, দিনাজপুরের মাছপাড়া ভাবকি গ্রামের আতিবুর রহমানের ছেলে আব্দুস ছালাম, টেকনাফের দরগাহছড়া গ্রামের আলী আন্তরার ছেলে জাহেদ হোসাইন ও ময়মনসিংহ এর গারাজান মধ্যপাড়ার বাসিন্দা হোসেন মুন্সির ছেলে সোহেল।
What's Your Reaction?






