মানবিক উদ্যোগে অংশ নিন

মানবিক উদ্যোগে অংশ নিন

করোনা সারা দুনিয়াকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। বিশ^ অর্থনীতিতেকেও উল্টেপাল্টে দিয়েছে করোনা। একদিকে করোনা অন্যদিকে কর্মহীন মানুষের নৈমিত্যিক চাহিদা, সবমিলে দিশেহারা মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে নি¤œ আয়ের মানুষ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে সহযোগী হওয়া একান্ত কর্তব্য। আমাদের করোনা যেমন মোকাবেলা করতে হবে, একই সঙ্গে মানুষের পাশে মানবিক উদ্যোগেও অংশ নিতে হবে। এই কাজ কেবল সরকারের একার নয়। এখনো সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ আছেন, যারা একটু একটু করে এগিয়ে আসলে আজকের এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবেই।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাণিজ্য চরমভাবে হুমকীর মুখে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে পরিবার ও সমাজে। বেরসকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যারা ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্ভর করে চলেন, তাদের পথে বসার অবস্থা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান চালু থাকলে তারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দেই থাকতে পারতেন। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেকটা বেসামাল অবস্থা। নি¤œ আয়ের মানুষ যেমন এক বেলা খেয়ে না খেয়ে, সহযোগিতা পেয়ে জীবান বাঁচাতে সক্ষম হচ্ছেন, কিন্তু এমন অনেক পেশা আছে সেসব কর্মীরা হাত পাততেও পারছেন না। এই দুরাবস্থা দূর করতে হলে আমাদের অবশ্যই মানবিক উদ্যোগে অংশ নিতে হবে। সহনশীল ও মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে এগিয়ে আসতে হবে। অনেকে এমন নানা উদ্যোগের সঙ্গে আছেন। যার প্রতিফলনও আমরা লক্ষ্য করছি।

আমরা জানি ছোট ছোট উদ্যোগ-ই বড় পরিবর্তন এনে দেয়। এই মুহূর্তে বরিশাল নদী বন্দরে অসহায় ও দুস্থ মানুষদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। একান্তই ক্ষুদ্র উদ্যোগ। কিন্তু এই উদ্যোগের কারণে ছোটখাটো চুরি-ছিনতাই বন্ধ হয়েছে। অসমায় মানুষের নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়ছে না। তাই এটা একটা ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। এছাড়াও অনেক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিজস্ব উদ্যোগে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সরবরাহ করছে। যা ছোট উদ্যোগ হলেও অনন্য উদাহারণ। বরিশালের ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীদের সংগঠন লাল-সবুজ সোসাইটি সাধ্যমত খাবার সরবারাহসহ সচেতনতামূলক নানান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। একটি ‘বাসদের’ কর্মসূচি সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন, মানবতার বাজারসহ অনেকগুলো ইতিবাচক উদ্যোগ সমাজের অসহায় মানুষদের সহযোগী হয়েছে। এমন ছোট ছোট অনকে উদ্যোগের মধ্যে বরিশাল জিলা স্কুলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মানবিক হয়ে অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি সহায়তা পৌছে দিচ্ছেন। পুলিশের ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসসহ জানা অজানা অনেক উদ্যোগ চলছে। যা আমাদের নি¤œ আয়ের এবং অসহায় কর্মহীন মানুষের কিছুটা হলেও সহযোগিতা দিতে সক্ষম হচ্ছে। তবে সেটা চাহিদার তুলনায় সামন্যই।

স্বেচ্ছাভিত্তিক এই উদ্যোগ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিতে পারলে যে দুর্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, এই দুর্যোগ অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতো। আমরা এখন উন্নত দেশের কাতারে উঠে পড়েছি। আমাদের এতটা অভাবের মধ্যে পড়ার কথা নয়। সমাজে এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান এবং বিত্তবান রয়েছেন, যারা আরো একটু মানবিক দৃষ্টি দিয়ে অসহায় কর্মহীন মানুষরা কিছুটা স্বস্তি পেত। মানুষ একান্ত অসহায় না হলে হাত পাতে না। হাতপাতা মানুষের সংখ্যা কমাতে হলে সবার এগিয়ে আসতে হবে। অংশ নিতে হবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগের সঙ্গে। আমরা চাই আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা সবার সহযোগিতায় যেন মানুষের হাসি-গানে মুখরিত থাকে। সেটা একমাত্র সম্ভব করতে পারেন আপনারা। আপনি, আমি এবং আমরা সবাই মিলে অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে সহযোগী হয়ে দাঁড়াই।