গতকাল সদর উপজেলার ২০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩৬টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ৩০৭টি সাউন্ড সিস্টেম দিয়েছে সরকার। অত্যন্ত আশার খবর এটা। পর্যায়ক্রমে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং মাল্টিমিডিয়া ল্যাব করে দেওয়া হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে শ্রণিকক্ষে হাতেকলমে অনেক কিছু শিকতে ও জানতে পারবে। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়। এটাই তো ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ফসল।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এর আগে দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজেও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ল্যাব করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের ওইসব প্রজেক্টর অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ল্যাব ব্যবহার হচ্ছে না। কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক মাঝে মধ্যে ওই কক্ষ খোলেন। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা কম্পিউটারগুলো ধুলোয় আটকে আছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সহসাই প্রবেশ করতে পারে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যেন সেই অবস্থা না হয়। শ্রেণিকক্ষে যেন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের পাঠদান করা হয়। মাল্টিমিডিয়া চালানোর জন্য যেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তা না হলে সরকারের কোটি কোটি টাকার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এক সময় বোঝা হয়ে যাবে। কেজি দরে বিক্রি করতে হবে। আমরা কোন অবস্থাতেই সেই দৃশ্য দেখতে চাই না।
বরিশাল শহরের নামি-দামি কয়েটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সেখানে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ঢুকতে পারছে না। দুই-একটি প্রতিষ্ঠান কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কেবল কম্পিউটারের সঙ্গ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ তারা পায় না। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকার কম্পিউটারে ধুলাবালি পড়ে আছে। ওইসব কক্ষ ব্যবহারই হয় না।
সরকার অর্থ ব্যয় করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম, কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ আাইসিটি শিক্ষক দেওয়া হয়নি। ফলে গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা কিংবা সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের ল্যাবের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তারা কম্পিউটারকে অতি আশ্চর্য বিষয়বস্তু হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন। এটা এভােেব ব্যবহার করা যাবে না ওভাবে ব্যবহার করলে নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষে যেতে অনাগ্রহী করে তুলছেন। এই ধারার পরিবর্তন করতে হলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক দেওয়া এবং সকল শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচিত হোক। মাধ্যমিক পর্যায়ে তারা কম্পিউটার ব্যবহারে পাদর্শী হবে। সরকারের উদ্যোগও সেটা। কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে কম্পিউটারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমাদের শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ল্যাবে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তারা যেন সহজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে সেদিকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নজর দিতে হবে। তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে কম্পিউটারে পারদর্শী হয়ে উঠবে। সেই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও তদরকি বাড়াতে হবে।
মান সন্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বরিশাল সদর উপজেলার প্রায় ২০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের হাতে মাল্টিমিডিয়া এবং সাউন্ড সিস্টেম তুলে দেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এখন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই প্রাথমিক স্তর থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ও সাউন্ড সিস্টেমসহ নানা শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের অবশ্যই আধুনিক প্রযুক্তি (মাল্টি মিডিয়া) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান এবং দেশ ও জাতির সঠিক ইতিহাস শিশুদের কাছে তুলে ধরার নির্দেশ দেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান রিন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মি ভৌমিক এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মধু ও রেহানা বেগম। এছাড়া বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ সভায় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার ২০৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩৬টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ৩০৭টি সাউন্ড সিস্টেম বিতরণ করেন প্রধান অতিথি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম।