মাশরাফীর হাতেই ৫ টি-টোয়েন্টি শিরোপা

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপার মঞ্চে জয় হলো অভিজ্ঞতারই। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিল মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের নিয়ে গড়া জেমকন খুলনা।
শুক্রবার আসরের ফাইনালে চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে নেয় খুলনা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৫৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে চট্টগ্রাম থামে ৬ উইকেটে ১৫০ রানে।
একটা ফাইনাল ম্যাচে যেমন উত্তেজনা চাই, ঠিক তেমনই ছিল এদিন মিরপুরের মাঠে। টস হেরে ব্যাট করতে নামা খুলনার শুরুটা হতাশার হলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে দলটা লড়াকু পুঁজি গড়ে। এরপর সৈকত আলীর ফিফটিতে চট্টগ্রামও বেশ ভালোভাবে এগোতে থাকে। তবে খুলনা কখনো ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যায়নি।
বরং স্নায়ুচাপের সময়গুলো দারুণভাবে সামাল দিয়েছে দলটি। এই ৩৭ বছর বয়সেও দুর্দান্ত ডাইভে মাশরাফীর ফিল্ডিং, তরুণ শহিদুল, হাসান মাহমুদদের বোলিং…। সব মিলে সেরা দলটার হাতেই উঠল শিরোপা।
লিগ পর্বে সবচেয়ে সফল ছিল চট্টগ্রাম। ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জিতে তারা। দুইবারের দেখাতেই তারা হারায় খুলনাকে। তবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রামকে হারিয়েই ফাইনালে উঠে আসে খুলনা। আর দ্বিতীয় সুযোগে (দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার) ফাইনাল নিশ্চিত করে ধারাবাহিক পারফর্ম করা চট্টগ্রাম।
তবে ফাইনালের আগের দিন চট্টগ্রাম কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেছিলেন, অভিজ্ঞতার জন্য খুলনাই ফেভারিট ফাইনালে। হলোও তাই। জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহদুউল্লাহর হাতে উঠল ট্রফি। মাশরাফী জিতলেন ঘরোয়া পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ট্রফি। পারিবারিক কারণে সাকিব আল হাসান ছিলেন না ফাইনালে। তার অভাব অবশ্য বুঝতে দেননি অন্যরা।
আসর জুড়ে ধারাবাহিক খেলার জন্য চট্টগ্রাম দলটাকেও কৃতিত্ব দিতেই হয়। দারুণ নেতৃত্বের জন্য কৃতিত্বের দাবি রাখেন মোহাম্মদ মিঠুন। টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান ও সেরা ব্যাটারের পুরস্কার দুটিই তো গেছে তাদের ঘরে। লিটন দাস সেরা ব্যাটার হয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান সেরা বোলারের সঙ্গে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও।
আর ফাইনালের নায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের বিপর্যয়ের মুখে যিনি টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেছেন। ইনিংসের প্রথম বলে উইকেট হারানোর পর থেকে নিয়মিত বিরতিতেই পড়ছিল জেমকন খুলনার উইকেট। চাপের মুখে ব্যতিক্রম ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের চওড়া ব্যাটেই ৭ উইকেটে ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় দলটি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৮ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান এসেছে জাকির হাসানের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া আরিফুল হক ২১ ও শুভাগত হোম ১৫ রান করেন।
চট্টগ্রামের পক্ষে নাহিদুল ও শরিফুল ইসলাম সর্বাধিক ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেনের শিকার ১টি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে ভালো শুরুরই ইঙ্গিত ছিল চট্টগ্রামের। তবে শুভাগত হোম ও আল-আমিন হোসেন দ্রুতই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে টানেন।
শুভাগত হোমের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে সৌম্যর ক্যাচ ফেলেছিলেন ইমরুল। সৌম্য তখন ৯ বলে ১২। কিন্তু সেই সুযোগ মোটেও কাজে লাগাতে পারেননি বাঁ-হাতি ব্যাটার। পরের লিগ্যাল ডেলিভারিতেই সৌম্যকে বোল্ড করে ফেরান শুভাগত।
পরের ওভারে মিঠুনকে (৭) ফিরিয়ে দেন আল-আমিন হোসেন। ২৩ বলে ২৩ রান করে রান আউটের শিকার হন লিটন দাস। ৫১ রানে ৩ উইকেট হারানো চট্টগ্রামের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সৈকত আলী। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন শামসুর রহমান শুভ। ২১ বলে ২৩ রান করা শামসুরকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ।
এরপর যে চাপ তৈরি হয় সেটি কাটাতে পারেনি চট্টগ্রাম। শেষ ২ ওভারে ২৯ ও পরে শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় চট্টগ্রামের সামনে। দুই সেট ব্যাটসম্যান সৈকত আলী ও মোসাদ্দেক ছিলেন উইকেটে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ বলে শহিদুল দুজনকেই তুলে নেন। একই সঙ্গে নির্ধারণ করে দেন ম্যাচের ভাগ্য।
নাহিদুল ছক্কায় শেষ করেছেন ম্যাচ, তবে উৎসব করেছে খুলনা।
সৈকত ৪৫ বলে ৪ ছক্কায় ৫৩ রান করেন। মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। খুলনার পক্ষে শহিদুল সর্বাধিক ২ উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন শুভাগত হোম, আল-আমিন হোসেন ও হাসান মাহমুদ