মুক্তিযুদ্ধের নির্মাণ ও পরিচালনায় ইসলাম ছিল প্রাধান্য বিস্তারকারী : শায়েখে চরমোনাই

মুক্তিযুদ্ধের নির্মাণ ও পরিচালনায় ইসলাম ছিল প্রাধান্য বিস্তারকারী : শায়েখে চরমোনাই

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নির্মাণ ও পরিচালনায় ইসলাম ছিল প্রাধান্য বিস্তারকারী এক শক্তি। মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ‘আল্লহর পথে জিহাদ’ বলে পরিচয় করে দিয়েছে। বেতার কেন্দ্রের সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতে মাঠ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণাই ছিল ইসলাম। এমনকি ৯ নম্বরন সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল আমার দাদাজান মাওলানা সৈয়দ এছহাক রহ. এর নিকট নিয়মিত যাতায়াত করতেন, দোয়া নিতেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতেন। শুধু তাই নয় চরমোনাইসহ আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমাদের চরমোনাই মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এতসব বাস্তবতার পরেও যেসব ইতিহাস বিকৃতিকারীরা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ইসলামের বৈপরিত্য জাহির করতে চান, তারা এর সমুচিত জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন।

১৬ ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল জেলা ও মহানগর কর্তৃক আয়োজিত বিজয় র‌্যালী পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাই।

তিনি বলেন, রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে যে বাংলাদেশ আমরা স্বাধীন করেছি সেই স্বাধীনতা আজও স্বপ্নই রয়ে গেল। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলেও সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা বলেন বিশ্বাস করি, স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ খুঁজে পেতে রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মিছে বিরোধের ফেনা তুলছেন তাদের জানা উচিৎ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নয় ইসলামই ছিল একাত্তরে স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। অপরদিকে এদেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের ধর্ম ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে একদল ভুঁইফোড় জনগোষ্ঠী। বলা হয়, এদেশের আলেম সমাজ এবং মুসলমানরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা পুরোপুরি উল্টো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মসূত্রে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি তাঁর মূলকে ধারণ করে প্রত্যেকটি বক্তব্য-বিবৃতিতে ইসলামের অবস্থান জানান দিয়েছেন। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেছিলেন ‘এদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’। তাঁর সে ঐতিহাসিক ইনশাআল্লাহর ধ্বনিতে উজ্জীবিত হয়ে এদেশের মুসলমানরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম করে এ ভূখ-কে স্বাধীন করেছে। সেই সংগ্রামী মুসলমানদের বাদ দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কল্পনাও করা যায় না।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানদের অবস্থান কি ছিল, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তা ভাল করেই জানেন। নতুন করে সেটা প্রমাণ করতে বক্তব্য বিবৃতি জরুরী নয়। তবে যারা ইসলামকে বিকৃত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকারদের পরিচয় তুলে ধরতে ইসলামের সিম্বলগুলো ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনারা সতর্ক হোন। নিজেদের রাজাকার তকমা ঢেকে রাখতে ইসলামকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করবেন না, এর ফলাফল কখনো শুভ হবে না। একই সঙ্গে আমি বাংলাদেশ সরকারকে বলব, যারা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন গল্প-সিনেমা-নাটক এবং তথ্যচিত্রে রাজাকারদের পরিচয় তুলে ধরতে ইসলামী সিম্বল ব্যবহার করে সেসব নির্মাতাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

দলের বরিশাল মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা জাকারিয়া হামিদী এবং জেলা সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় র‌্যালী পূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় ছাত্র যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন, গত বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী হাফেজ মাওঃ ওবায়দুর রহমান মাহবুব, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা সৈয়দ নাছির আহমাদ কাওছার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য নওমুসলিম ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা লুৎফর রহমান, জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা ইদ্রিস আলী, জেলা জয়েন্ট সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা জামিলুর রহমান, মহানগর জয়েন সেক্রেটারি মাওলানা আবুল খায়ের, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন মহানগর সভাপতি ও চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আমানুল্লাহ আমান, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ নগর সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ নাসের, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন জেলা সভাপতি মাওলানা নাসির উদ্দিন রোকন ডাকুয়া, ইসলামী যুব আন্দোলন মহানগর সভাপতি মাওলানা আরিফুর রহমান, জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা সানাউল্লাহ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মহানগর সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম, জেলা সভাপতি মুহাম্মদ মুঈনুল ইসলাম।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে মুসলমানদের অবদান এবং চরমোনাই মাদরাসার অবস্থান তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন শ্রী দুলাল দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহীদ গাজী, মো. আ. হালিম মজুমদার প্রমূখ।