মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান মা

বরিশালের বানারীপাড়ায় জাসদ নেতা সৈয়দ হুমায়ুন কবির হত্যার বিচার দাবি জানিয়েছেন তার বৃদ্ধা মা ফিরোজা বেগম। উপজেলায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ্পস্থিত থেকে নিহত হুমায়ুন কবিরের মা ওই দাবি করেন।
গত বুধবার বানারীপাড়ায় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত মানবন্ধনে তিনি এ দাবি জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে তিনি বলেন, আমার বাবার খুনের বিচার চাইয়া কানতে-কানতে আমার চউখে (চোখে) পঁচন ধরছে। আমার শ্যাষ ইচ্ছা, আমার পোলার (পুত্র) খুনির বিচারের খবরডা হুইন্যা মরমু।
নিহত সৈয়দ হুমায়ূন কবিরের ভাই সৈয়দ তরিকুল ইসলাম আপনুর বলেন, কোন বিরোধ ছাড়াই আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে মিন্টু, টুকু, সালাম, রঞ্জু, ফিরোজ। আমার ভাই সৎ মানুষ ছিলেন। রাজনীতি করে অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন। তিনি ছিলেন উপজেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক। খুনিরা প্রতিহিংসার কারনে রোজাদার সৈয়দ হুমায়ূন কবিরকে জুমার নামাজের আগে কুপিয়ে হত্যা করে পথের কাটা দূর করেছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জিয়াউল হক মিন্টু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে শুনেছি। আরেক খুনি মজিবুল ইসলাম টুকু চাখার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাকি খুনিরাও এদের ছত্রছায়ায় আছেন। চার্জশিটে এরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু জামিন নিয়ে এসে আমাদের আবারও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিচার পাবো কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
মামলার আইনজীবী আনিচুর রহমান বলেন, ক্ষমতার মুখোশে থাকা এইসব খুনিদের ফাঁসি হোক এটাই দাবি নিহতের পরিবারের। একই সাথে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামীদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার করার দাবী জানান তিনি।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মামলার স্বাক্ষী মো. জাফর আলী, নিহতের বোন আইনুন নেছা, আক্তারুন নেছা, ভাই সৈয়দ কায়কোবাদ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার সৈয়দ হুমায়ুন কবির উপজেলার মাদারকাঠী গ্রামের বাড়ি থেকে রোজাদার অবস্থায় চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় ধরে নিয়ে গিয়ে মাদরকাঠী বাসস্ট্যান্ড মার্কেটের নিচতলায় আটকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, ওই মার্কেটে আটকে দা, হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। খুনিরা সৈয়দ হুমায়ূন কবিরের পায়ের ও হাতের রগ কেটে দেন। হাতে-পায়ে পেরেক ঠুকে, অন্ডকোষ থেতলে, মাথায় উপুর্যপরি কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেন। খবর পেয়ে স্বজনরা আহত হুমায়ূনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
পরদিন ২০ জানুয়ারী সৈয়দ হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই সৈয়দ তরিকুল ইসলাম আপনুর বাদি হয়ে ১৯ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) সনজিৎ কুমার ওই বছরের ২৩ অক্টোবর জিয়াউল হক মিন্টু, মজিবুল ইসলাম টুকু, আব্দুস সালাম, রঞ্জু, ফিরোজসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করেণ। আদালতে এ পর্যন্ত মামলার ২৭ জনের স্বাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছে।