মৃত্যুহীন প্রাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

মৃত্যুহীন প্রাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।’ আজ আকাশে-বাতাশে সেই নামের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মুজিবকে মুছে ফেলতে গিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে লাল রঙে লেখা হয়ে গেছ বঙ্গবন্ধুর নাম। তাই জীবীত বঙ্গবন্ধু যে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল বাঙালির প্রাণে, মৃত বঙ্গবন্ধু প্রতিটি প্রাণে বারুদ হয়ে জ¦লে উঠেছে। তাই তো বলতে হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক মৃত্যুহীন প্রাণের নাম। তাঁকে আর কোনদিন বাংলার মাটি এবং পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা যাবে না।

এরকম দৃঢ়তার সঙ্গে বলার একটি কারণ আছে। অনেক দিন আগে ‘দেয়ালের লিখন’ নামে একটি নাটক দেখেছিলাম। নাটকের কাহিনীটা এরকম, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক মানুষ কারাবরণ করেন। ওই সময় জেলখানার ভেতরেও কয়েদিরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নানারকম প্রচারণা চালাত। তেমনি একদিন এক কয়েদি জেলখানার ভেতরের দেয়ালে কালো কালি দিয়ে লিখে দেয় ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’। ওই লেখাটি জেলরের চোখে পড়লে তিনি তেলে-বেগুনে জ¦লে ওঠেন। কারণ তিনি তো ওই সেনাদেরই চাকরমাত্র। তার কারাগারে এরকম লেখা লিখলে তার চাকুরী চলে যাওয়ার কথা। তাই তিনি ওই লেখা মুছেদিতে উঠেপরে লেগে যান। এক পর্যায়ে তিনি কারাগারের ভেতরে থাকা এক রঙমিস্ত্রিকে ডেকে বলেন, ‘কালো রঙের লেখাগুলোর ওপর সাদা (চুনকাম) সাদা রঙ দিয়ে ঢেকে দাও।’ রঙ মিন্ত্রী কালো দাগের ওপর ভালোভাবে সাদা রঙ লাগিয়ে দেন। জেলর এসে দেখেন লেখাগুলো আরো আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেখে জেলার আরো ক্ষেপে যান। এরপর অন্য এক রঙমিস্ত্রি এনে লাল রঙ ঢেকে দিতে বলেন। রঙ মি্িস্ত্র তাই করেন। তাতে লেখাগুলো আরো চকচক করতে থাকে। এরপর জেলর এক রাজমিস্ত্রিকে ডেকে পাঠান। বলেন ‘ওই লেখাগুলো খুচিয়ে তুলে দাও।’ রাজমিস্ত্রি দাগ দেওয়া লোখাগুলো দেওয়াল থেকে তুলে দেয়। এরপর দেখা যায় পুরো দেয়াল জুড়ে সেই লেখা স্থায়ী হয়ে যায়। এরপর জেলর এসে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজমিস্ত্রিকে মারধর করতে থাকেন। তখন যে কয়েদি ওই লেখা লিখেছেন সে জেলরকে বলেন, ‘জেলার এখন আর এই দেয়ালের লিখন কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। এখন যদি এই লেখা মুছতে হয়, তাহলে জেলখানার ওই প্রাচীর ডিনামাইড দিয়ে গুড়িয়ে দিতে হবে।’

বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী সেনা সদস্য এবং বিদেশী মদদ দাতারা ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িসহ আরো কয়েকটি স্থানে। এর মূল কারণ ছিল বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেওয়া। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে কলংকিত করা। দীঘ বছর দেশি বিদেশিরা সেই চেষ্টা করেছে। এখনো ষড়যন্ত্র থেমে নাই। কিন্তু ওই সময় নাম মুছতে গিয়ে তারাও দেয়ালের লিখনের মতো বঙ্গবন্ধুর নাম খোদাই করে লিখে দিয়েছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে। কোন রঙ দিয়ে ওই নাম মুছে ফেলা সম্ভভ নয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাম লেখা আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। এখন বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে হলে গোটা দেশ গুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সেটা কোনভাবেই সম্ভভ হবে না। সেই স্বপ্ন যারা দেখছেন তাদের সেই স্বাদ পূরণ হবে না এটা নিশ্চিত জেনে রাখুন। যতদিন বাংলাদেশে একটি বাঙালি প্রাণ জীবিত থাকবে ততোদিন বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যাবে না। 


বঙ্গবন্ধু একটি নাম। যাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি দেশ, পতাকা ও মানচিত্র। রজনীতির কবি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি বাঙালির দিক নির্দেশক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির সেই মহানয়ক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আজ আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সেইদিনের নির্মমতার শিকার হয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানই।

একই সঙ্গে উচ্চারণ করি, যিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফন্ট নির্বাচন, ৬৬’র ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থানের রজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে কারাগারের মাঠ পর্যন্ত সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাণ পুরুষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানয়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে মুছে ফেলার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। মৃত্যুহীন প্রাণ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবে আমাদের প্রতিটি অন্তরে।