মেলেনি আনসারদের ছোড়া গুলির হিসাব

মেলেনি আনসারদের ছোড়া গুলির হিসাব

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসভবন হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে আনসার সদস্যদের গুলিবর্ষণের পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও কত রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল তার হিসাব মেলেনি। আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে কমপক্ষে ৬০ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এক ইউপি সদস্যের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। 

ঘটনাটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উত্তাপ ছড়িয়ে ইতোমধ্যে ‘মিটমাট’ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে পাল্টাপাল্টি দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বরিশাল আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট আমমার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকেলের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ করতে না পারায় তারা আজ প্রতিবেদন জমা দেননি। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে আরও দুইদিন তাদের সময় লাগবে।

এটি কি শুধু সময়ক্ষেপণ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতের ঘটনাটি ছোটখাটো কোনো ঘটনা নয়, এটি অনেক বড় ঘটনা। ফলে এটি নিয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

আমমার হোসেন বলেন, আনসার সদস্যরা কত রাউন্ড গুলি করেছে তা এখনো নিশ্চিত নই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান জানিয়েছিলেন, তিনি আনসার সদস্যদের গুলির নির্দেশ দেননি। তাহলে আনসার সদস্যরা কার নির্দেশে গুলি ছুড়েছিল-এসব বিষয় স্পষ্ট হতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুজন আনসার সদস্য এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ফারুক গাজীর পায়ে গুলি লেগেছে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আহত আরেক আনসার সদস্য মাহতাব বরিশালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সদস্যরা এক রাউন্ড গুলিও করেনি। শুধুমাত্র জড়ো হওয়া লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে লাঠিচার্জ করেছে। তাছাড়া গুলিবর্ষণের অনুমতিও ছিল না পুলিশের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তিনিসহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার অপসারণে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা সেখানে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ব্যানার অপসারণে নিষেধ করা হয়। এ নিয়ে গুলি বর্ষণ, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে।

এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারান নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনিরুল ইসলাম মুনির ও কশিপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আতিকুর রহমান রায়হান।

এ ঘটনার পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ ৬০২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। মামলার সূত্র ধরে কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতা, বাস মালিক নেতা, শ্রমিক নেতাসহ এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। 

অন্যদিকে রোববার (২২ আগস্ট) বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইউএনও মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলামসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। যদিও ওইদিন রাতে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদলের সমঝোতায় বিষয়টি ‘মিটমাট’ হয়েছে বলে মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে জানানো হয়েছে।