মেহেন্দিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙে পড়েছে

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জর উপজেলার শ্রীপুরে মুজিব বর্ষে গৃহ ও ভূমিহীনদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১১টি ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। জোয়ারের পানি আটকে থাকায় ওই ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এদিকে প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে ওই ঘর দেয়ার কথা থাকলেও অর্থের বিনিময়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর এখন রান্না ও লাকড়ির ঘর হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ বঞ্চিতদের।
বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন মাসুদ জানান, মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৩১৭টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়া হয় ২৫২টি ঘর। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৫টি ঘর এখনও নির্মানাধীন। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৭১ হাজার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘরের জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি ওই উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কাঠের পোল এলাকায় প্রথম পর্যায়ে ৪০টি ঘর ও জমি কাগজপত্রসহ সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। বরাদ্দ দেয়া ৪০টি ঘরের ১৬টি ঘরের পিলার বালু ধ্বসে বাঁকা হয়ে পড়েছে। কোন ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়েছে, আবার কোনটির দেয়ালে বড় ফাঁটল ধরা পড়েছে। ছুটে গেছে জানালার গ্রীল। খুলে গেছে টিনের ছাউনী। বৃষ্টির সময় টিনের ফাঁকা দিয়ে ঘরে পড়ছে পানি। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া জোয়ারের সময় পানি আটকা পড়ে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। বৃষ্টি হলে ঘরগুলোর মেঝেতে পানি জমে যায়। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং দেয়াল ধ্বসে পড়ায় ওই ১১টি ঘরে কেউ বসবাস করছে না।
খবর পেয়ে গত বুধবার শ্রীপুর আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম।
উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় গত ৭ জুলাই অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্য হিসেবে গত বুধবার তিনি শ্রীপুর আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এ সময় একটি ক্লাস্টারে থাকা ১৬টি ঘরের ২টি একটু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১৪টি ঘর আশিংক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখতে পান। ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ এবং এ জন্য কারও গাফেলতি কিংবা দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটা তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে শ্রীপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। প্রকৃত গৃহ ও ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে স্বচ্ছলদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যানের আত্মীয় মো. রাকিব এবং আনসার সদস্য মিজানুর রহমানও ঘর পেয়েছেন। চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় ক্লাস্টার ছাড়িয়ে অদূরে শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ এবং চৌচালা ঘরের মালিক এক মাছ ব্যবসায়ী মো. রফিকের বসত ঘর লাগোয়া দুটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা সেই ঘরে থাকেন না, তবে রান্না এবং লাকড়ির ঘর হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ব্যবহার করেন তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর রশিদ জানান, ঘর বরাদ্দে তিনি কোন আর্থিক সুবিধা নেননি। যাদের ঘর নাই তাদের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোন দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতি হয়নি।
ঘর বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন মাসুদ বলেন, দুই মাস আগে তিনি এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি যোগদানের আগেই প্রকল্পের সুবিধাভোগী নির্ধারিত হয়েছে। প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই।