বরিশালে সৌদির খেজুর ফলিয়ে সফল উদ্যোক্তা মামুন

বরিশালে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সৌদি খেজুর ফলিয়ে সাফল্য দেখিয়েছেন আল মামুন। এক সময়ে সৌদি প্রবাশী আল মামুন সৌদি আরব থেকে খেজুর বীজ এনে রোপন করে খেজুর ফলিয়ে ওই সাফল্য দেখিয়েছেন। তাঁর এই সাফল্যে সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। সৌদি খেজুর চাষে উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছে কৃষি বিভাগ।
সৌদি আরবে ১৭ বছর প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরে সৌদি আরবের সেরা ৩ জাতের খেজুর উৎপাদন করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলা ধামসর গ্রামের আল-মামুন।
গত ৫ বছর আগে আল মামুন ৩০ শতাংশ জমিতে খেজুর বাগন করেন। এবছর তাঁর লাগানো ৫০টি খেজুর গাছের মধ্যে ৩টি গাছে ফল এসেছে। দুটি গাছের ফলন ঝরে গেলেও একটি গাছে ফলন এসেছে। আরব দেশের খেজুর দেশের মাটিতে হয়েছে দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে আরও ৪০ শতাংশ জমিতে খেজুর বাগানের উদ্যোগ নিয়েছেন। সৌদি খেজুরের ফলন হচ্ছে এমন সংবাদ শুনে তার বাগান দেখতে আসছে অনেকে।
আল মামুন জানান, সৌদিতে তিনি ১৭ বছর ছিলেন। প্রবাস জীবনে মরুভূমির মধ্যে খেজুর বাগান দেখে নিজ দেশে এই জাতের খেজুর বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। গত ১০ বছর আগে সৌদি থেকে খেজুর গাছের ৭টি ড্যাম (চারা) দেশে পাঠালোও সেগুলো রোপন করে বাঁচাতে পারেননি তার বাবা। ২০১৩ সালে সৌদি আরব থেকে ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফেরেন তিনি। শুরুতে মাইক্রোবাস কিনে ব্যবসা শুরু করলেও ব্যবসায় সফলতা না দেখে গাড়িটি বিক্রি করে ফেলেন। ২০১৫ সালে সৌদি আরব থেকে পৃথিবীর সেরা আজোয়া, আম্বার ও চুক্কারী জাতের কিছু খেজুর দেশে এনে তার বীজ দিয়ে চারা উৎপাদন করে ৩০ শতাংশ জমিতে খেজুর বাগান করেন তিনি। তখন অনেকে উপহাস করলে থেমে থাকেননি অদম্য মামুন। কঠোর পরিশ্রম আর পরিচর্যায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাছে ফলন আসে। ৫০টি গাছের মধ্যে এবছর ৩টি গাছে খেজুর ধরে। পরাগায়নসহ নানা কারণে শেষ পর্যন্ত একটি গাছের ফল টিকেছে। প্রথম গাছের ৪০ কেজির বেশি খেজুর পেয়েছেন তিনি। সমস্ত খেজুর তিনি নিজে এবং আত্মীয়-স্বজদের খাইয়েছেন। সৌদি খেজুর ফলনের খবরে অনেকেই তার বাগান দেখতে আসছেন। উৎপাদন পদ্ধতি এবং পরিচর্যার খুটিনাটি বিষয় জেনে নিচ্ছেন আল মামুনের কাছ থেকে। খেজুর চাষে সাফল্য পাওয়া এবার আরও ৪০ শতাংশ জমিতে সৌদি খেজুর বাগান সম্প্রসারণ করেছেন উদ্যোক্তা আল-মামুন।
আল মামুন বলেন, সৌদি আরবের মরুতে বালুর মধ্যে খেজুরগাছ হলে বাংলাদেশের মাটিতে আরও বেশি সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তরুন-যুব সমাজ সৌদি খেজুর চাষে আত্মনিয়োগ করলে সাফল্য আসবে এটা তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।
বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. তাওফিকুল আলম বলেন, আল-মামুন সৌদি খেজুর চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন। খেজুর চাষ খুবই লাভজনক। এটা পুষ্টিকর খাবারও। কৃষি বিভাগ সৌদি খেজুরের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা সৌদি খেজুর চাষের উদ্যোগ নিলে কারিগরিসহ সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হবে।
সৌদি খেজুর ছাড়াও পাকিস্তানী ও চায়না মাল্টা এবং কমলা চাষ করছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা আল মামুন।