মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের ‘খরচ বাড়বে’

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের ‘খরচ বাড়বে’

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত গ্রহাকদেরই খরচ বাড়বে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী বাজেটের রূপরেখা উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমএফএস প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর ৩২ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস কোম্পানির করপোরেট কর ৩২ দশমিক ৫ থেকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন।

এতে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর করপরবর্তী মুনাফা কমে যাবে। তাতে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

তারা বলছেন, ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সাশ্রয়ী খরচে জনগণের দোরগোড়ায় এই সেবা পৌঁছে দেওয়ার দরকার রয়েছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এত উচ্চ কর দিয়ে এ ব্যবসা করতে হলে গ্রাহকের কাছ থেকে উচ্চহারে সার্ভিস চার্জ নিতে হবে। ফলে শেষমেশ গ্রাহকের খরচ বাড়বে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিরুৎসাহিত হবে।

করপোরেট কর বাড়ানোর এই প্রস্তাবকে যৌক্তিক মনে করছেন না বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি বড় লক্ষ্য ছিল করপোরেট কর ৩০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। সেখানে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব কোনোভাবেই যুক্তিসংগত হতে পারে না।’

তবে ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনই হয়তো গ্রাহক পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই খাতটিতে বিনিয়োগ এবং সার্বিকভাবে আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি আর্থিক খাতের ডিজিটালাইজেশন করতে না পারলে ডিজিটালাইজেশনের সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। তা ছাড়া দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং নগদ টাকার ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে এমএফএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সঙ্গে এ ধরনের লেনদেন স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখে।

জানা গেছে, বর্তমানে কোনো মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। সেই হিসেবে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ কর দিতে হবে।

তবে এই কর দিতে হবে নিট মুনাফার ওপর। অধিকাংশ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই মুনাফায় নেই বলে জানায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের আলাদা করে আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে মুনাফার ওপরও কর দিতে হয়। এত দিন এই কর ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। তবে এটা বাড়ানো হলে অনেক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহ দেখাবে।

কেন না, তালিকাভুক্ত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম হবে।

নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় ধরনের অবদান রেখেছে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশে বর্তমানে ১৫টি ব্যাংক এমএফএস সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া ডাক বিভাগের নগদও এমএফএস সেবা দিচ্ছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কর বাড়লে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। তাতে এই সেবার মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবার সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায়। ২০১১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ কোটির বেশি হিসাব খোলা হয়েছে এই সেবার আওতায়। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ কোটি হিসাবে নিয়মিত লেনদেন হয়।

এ সেবার মাধ্যমে কেনাকাটার বিল পরিশোধ, ই-কমার্সের পেমেন্ট, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়া, স্বল্প পরিসরে রেমিট্যান্স বিতরণ, কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়াসহ অনেক ধরনের আর্থিক সেবা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এ কারণে দিন দিন এই সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ খাতে দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ আসছে। তবে করপোরেট কর বাড়ালে প্রাপ্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।