রোজা পালনে সংযমী হতে হবে কথায় ও কাজে

রোজা পালনে সংযমী হতে হবে কথায় ও কাজে
৫টি ফরজ এবাদতের মধ্যে রোজা অন্যতম। পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। দিনের বেলা সব ধরণের আহার পরিহার করে সংযম পালন করছেন মুসিলম ধর্মের অনুসারীরা। অনাহারে কষ্ট পাওয়া মানুষের কষ্ট উপলব্ধিতে আনা, লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং পাপবোধ থেকে দূরে থাকাতে একমাস সিয়াম সাধন করছে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল মানুষমাত্রই রোজাকে ত্যাগের মহান মহিমা হিসেবে দেখেন। নিজের লোভকে ত্যাগ করে ক্রোধকে সংবরণ করার জন্যই রোজা রাখেন মানুষ। আমরা যখন ষষ্ঠ রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো তখনই আমদের ত্যাগ সার্থক হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই, আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষরা রোজা রাখার মাধ্যমে সেই সংযমই পালন করেন। এই ত্যাগ তখনই স্বার্থক হবে, যখন আমরা রোজার পালনের সঙ্গে কাথা ও কাজে সংযমী হবো। আমাদের সংযমী হতে হবে আহার, নিদ্রা থেকে শুরু করে আচার-আচরণ ও কথা-কাজে। আমার পাশে বসে একজন আাহার করলেই আমার সংযম চলে যাবে কিংবা আমার রোজার ওপর প্রভাব পরবে এমন ধারণা থাকা মোটেই সঠিক নয়। মোটা দাগে আমরা সংযমের অর্থ বুঝি, আমার পাশে বসে অন্য একজন আহার করলেও আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়র একটিও জাগ্রত হবে না। আমি আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সংযম সার্থক হবে। আমি আহার গ্রহণ না করে সংযম পালন করছি। একই সঙ্গে অন্য কাউকে আহার গ্রহণ করতে দেখলে আমার লোভ জাগ্রত হবে না। আমি কাউকে আহার করতে দেখে বিক্ষুব্ধও হয়ে তার ওপর চড়াও হবো না। যে মানুষটি রোজা রাখতে পারেনি তাঁর খাবার বন্ধ করা আমার কাজ হওয়া উচিত নয়। রিজিক-এর মালিক আল্লাহ। তিনি যদি কারো খাবার বন্ধ না করেন, তাহলে মানুষ হিসেবে আমি কেন খাবার বন্ধ করার মতো নির্দেশনা দেবো। তাতে আমার রোজা কিংবা আমার সংযম পূর্ণ হবে না। তিনি আহার করছেন বলেই তিনি অন্য ধর্মের মানুষ এমন নাও হতে পারে। আমার ধর্মের মানুষও অসুস্থ থকাতে পারে। আর অসুস্থ্য হলে তার জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়। এটা কোরআনের কথা। হোটেল রেস্তোরা বন্ধ রাখার দাবি যারা করেন, তারাও জানেন, খাবার হোটেল বন্ধ হলেই আমার সংযম পূর্ণ হবে এমনটা নয়। তাই খাবার দোকন বন্ধ রাখার আহ্বানের সঙ্গে রোজার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। হজরত মুহাম্মদ (স:) বলেছেন ‘তোমার জন্য তোমার ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম’। সারা দুনিয়ায় যেমন মুসলমান আছে, তেমনি অন্য ধর্মের মানুষও আছে। তারা তাদের ধর্ম পালন করবে। আমি আমার ধর্ম পালন করবো। কেউ কারো ধর্ম পালনে বাধা দিলে সেখানে প্রতিবাদ করা দরকার। আমার রোজা পালনে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে অবশ্যই মুসলমান হিসেবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করতে হবে। কিন্তু যতদিন বাংলাদেশে নানান ধর্মের মানুষের বসবাস থাকবে ততদিন কি দিনের বেলা হোটেল রেস্তোরা বন্ধ করা সঠিক হবে? অন্য ধর্মের মানুষের তো অধিকার আছে দিনের বেলা আহার করার। আমরা বলি এবং মানি, ইসলাম ধর্ম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আমরা শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী হয়ে কেন হীন সিদ্ধান্ত নেবো? আমি যেমন সংযম পালন করবো, তেমনি অন্যদের অধিকার রক্ষাও করতে হবে। হোটেল রেস্তোরা বন্ধ করে সংযম পালন কতটা যুক্তিযুক্ত। কেবল দিনের বেলা আহার না করে সংযম পালন করলে হবে না। সংযম পালন করতে হবে আচার-আচরণ, কথা-কাজে এবং ষষ্ঠ রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। কেবল রোজার মাস নয়, সারা বছর যেন যেন আমরা সংযমী হতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রোজার মাসে আমাদের ক্রধকেও আরো একটু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রোজা আমদের সেই শিক্ষাই দেবে।