শাপলা বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী

শাপলা বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী

বরিশালের শাপলার বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছের দর্শনাথীরা। ভরা মৌসুমে প্রাণ ফিরেছে শাপলা বিলে। প্রতিদিন বিস্তীর্ণ বিলে ফুটে থাকে লাল সাদা আর নীল শাপলা। সাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভীড় জমাচ্ছেন এই বিলে। তবে সড়কের ভোগান্তিতে বিপর্যন্ত দর্শনার্থীরা।

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা এলাকায় বিস্তীর্ণ বিলের নান্দনিক শাপলা দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন। তবে জেলা শহর এবং মহাসড়ক দিয়ে বিলে যাওয়ার রাস্তাঘাট সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া বিলের আশপাশে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি বাথরুম টয়লেটেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশা দর্শনার্থীরা চরম দুর্ভাগে পড়েন। দর্শনাথীদের দাবি শাপলার বিলকে পর্যটন বান্ধব করার।

রাস্তাঘাটের সংস্কার করে  শাপলা বিলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।  

বরিশাল বিভাগীয় সদর থেকে সড়ক পথে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে প্রত্যন্ত সাতলা বিল। বরিশাল জেলা সদর কিংবা উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে সাতলা বাজারে যেতে সড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে বিল আর বিল। হরতা বাজারের পর থেকে সাতলা যেতে দুই দিকে বিলের বুকে ৩ থেকে চার ফুট পানির ওপরে মাথ উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শাপলা আর শাপলা ফুল। আষাঢ়ের শুরুতে প্রকৃতিগতভাবে বিলে ফুটতে শুরু করে শাপলা। আর শ্রাবন থেকে ফুটতে শুরু করে লাল, সাদা আর নীল শাপলা। ফুলে ফুলে ছেয়ে থেকে পুরো বিল। 

করোনার কারণে এবার মৌসুমের শুরুতে দর্শনার্থী কিছুটা কম হলেও এখন প্রতিদিনই সেখানে ভীড় করছেন হাজারো পর্যটক। নৌকায় বিলের পানিতে ঘুরে ঘুরে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। কেউ সেলফি তোলেন। কেউ আবার শাপলা তুলে নিয়ে যান। সরকারি ছুটির দিনে জমজমাট হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শাপলার বিল। রাতে ফুটে থাকা শাপলা ফুল রোদ ওঠার পর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এ কারণে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সূর্যের আলো তীব্র হওয়ার আগে পৌঁছাতে হবে।

ব্যবসায়ী কাজী আসাদ আহমেদ নয়ন বলেন, শাপলার বিল দেখে তারা বেশ আনন্দ পেয়েছেন। কিন্তু শাপলার বিল যেতে উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে সাতলা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলেমিটার সড়কের বেহাল দশার কারণে সেই আনন্দ অনেকটাই ম্লান। ভাঙ্গা রাস্তায় সেখানে যেতেই দর্শনার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় যাবাহন উল্টে কিংবা কাত হয়ে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এ কারণে ইচ্ছে থাকলেও দ্বিতীয়বার যেতে চান না অনেকে। 

দর্শনার্থী হাফিজ উদ্দিন জানান, বরিশাল জেলায় এতো সুন্দর শাপলার বিল আছে এখানে না আসলে তা বুঝতে পারতাম না। তবে আশা-যাওয়ার পথের সড়কের দুর্ভোগ কমালে মানুষ সানন্দে উভোগ করতে পারতো। তারপরও শাপলার বিলের অপার সৌন্দর্য ঘিরে সাতলায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত।

বেড়াতে যাওয়া তরুনী আফসানা ইসলাম জানান, করোনাকালে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে শাপলার বিল এসে মুগ্ধ হয়েছি। অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে অভিভূত। শাপলা বিলের শান্ত পরিবেশে এসে প্রশান্তিতে ভরে গেছে। এক কথায় আমরা মুগ্ধ।

ব্যবসায়ী নূর হোসেন মিরণ জানান, শাপলার বিল দেখে তারা আনন্দ পেয়েছেন। কিন্তু মহিলাদের নিয়ে এখানে এসে তারা বিপদে পড়েছেন। তবে ওয়াশরুম, টয়লেট, বাথরুমসহ থাকা খাওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। বিলে বেড়ানোর জন্য নেই পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থাও। 

দর্শনার্থী ব্যাংকার আবু জাফর খান বলেন, শাপলার বিল ঘিরে বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে এখানে অবকাঠামোগত কিছু সুবিধা সড়কপথের সংস্কার হলে দর্শনার্থী অনেক বাড়বে। এতে প্রত্যন্ত এই বিলাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখার জন্য এই সময়ে অনেক পর্যটক সেখানে আগমন করে। বরিশালের সাতলা-হারতার শাপলার বিল পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। শাপলার বিলকে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটন বান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য পর্যটন করপোরেশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে ওয়াশরুম ও রেস্ট রুম নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে। শাপলার বিলে যাওয়ার রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিঘ্রই ওই সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শাপলার বিলকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।