শিশুকে সাঁতার শেখাতে উদ্যোগ নিন

শিশুকে সাঁতার শেখাতে উদ্যোগ নিন

এক সময় বরিশাল নগরীতে শতাধিক পুকুর ছিল। তখন নগরের শিশুরা নির্বিঘেœ এসব পুকুরে সাঁতরে বেড়াত। সাঁতার শেখার জন্য কোন মাধ্যম দরকার হতো না। নগরের বরিশাল কলেজ পুকুর, অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের পুকুর, রাখাল বাবুর পুকুর, বিবির পুকুর, পৌরসভা পুকুর, থানার পুকুর, জেলখানার পুকুর, ব্রজমোহন কলেজের ১১ পুকুরসহ সব পুকুরে সাঁতার কাটত শিশু থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধ বনিতারা। উন্নয়ন ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় নগরের সেই পুকুরগুলোর অনেকটাই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। পুকুর-জলাশায় ভরট শুরু হতে থাকায় শিশুদের সাঁতার শেখার সুযোগ বন্ধ হতে থাকে। বর্তমানে সাঁতার শেখার মতো পুকুর নেই বললেই চলে। যে দুই একটি আছে সেখানেও প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। আধুনিকতার নামে পুকুর জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় শিশুরা এখন আর সাঁতার শিখতে পুকুরে নামার সুযোগ পাচ্ছে না।

১৯৯৭ সালে বরিশালে শিশুদের সাঁতার শেখানোর সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারিভাবে সুইমিংপুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছর অক্টোবর মাসে সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর সুইমিংপুলে পানি ওঠাতে গিয়ে ফাঁটল ধরা পরে। এরপর আর সুইমিংপুলে পানি ধরে রাখা যায়নি। ওই অবস্থায় ২০০০ সালের ১১ এপ্রিল সেটি উদ্বোধন করা হয়। ওই সুইমিংপুল আলোর মুখ দেখেনি। সুইমিংপুলটি আজ পর্যন্ত কোন কাজে আসেনি। তবে কয়েকবার বাইরে থেকে পানি এনে সাঁতার প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছিল প্রশাসন। ওই পর্যন্তই শেষ। এরপর থেকে আর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে শিশুদের সাঁতার শেখার কোন সুযোগ সৃষ্টি করা যায়নি।

এমন প্রতিকূলতার মধ্যে দুই একবার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিশুদের সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ নেয়। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবারও শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে আশার সংবাদ। কিন্তু সাঁতার শেখানোর জন্য উপযুক্ত জলাশয় পেতে হিমশীম খেতে হয়েছে তাদের। শষ পর্যন্ত নগরের আমানতগঞ্জ এলাকায় শহীদ সুকান্ত বাবু স্মৃতি পার্ক সংলগ্ন পুকুর, ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা বিদ্যালয় পুকুরসহ চারটি পুকুর সাঁতার শিখানোর জন্য নির্বাচন করা হয়।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র গতকাল বুধবার দুপুরে ওই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেছেন। এসময় মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বচারে বরিশালের পুকুর-জলাশয় ভরাটের কারণে শিশুরা সাঁতা শিখতে পারছে না। ফলে দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের এ অঞ্চলে পানিতে ডুবে সাতার না জানা শিশুদের মৃত্যু হার বাড়ছে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু হার কমাতে পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। এব্যাপারে মেয়র উদ্যোগ নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।

আমরা চাই, নগরের পুকুরগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করে সাঁতার শেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে সরকারিভাবে সুইমিংপুল নির্মাণ করে সেখানে সরকারি প্রশিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। নগর ভবন উদ্যোগ নিলে নগরের পুকুর ভরাট বন্ধ করা সম্ভব হবে। আর শিশুরা মুক্ত জলাশয়ে সাঁতার শেখার সুযোগ পাবে।