শুধু অপেক্ষা

কথা ছিল এবার বিদেশ থেকে বাড়িতে এসে বিয়ে করবেন। বাবা-মায়ের জন্য সুন্দর করে বানাবেন বাড়ি। কিন্তু যে বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা সেখানে এখন চলছে মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি। নৌ-প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান ঠিকই বাড়িতে ফিরছেন, তবে লাশ হয়ে। অপেক্ষায় থাকা হাদিসুরের বাবা-মা ভাই-বোনের বিষাদময় দীর্ঘশ্বাসে যেন বরগুনার বেতাগীর আকাশ-বাতাসও গুমোট হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’। সেখানে নোঙর করা অবস্থায় গত ২ মার্চ জাহাজটি রকেট হামলার শিকার হয়। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ।
নিহত নৌ-প্রকৌশলী হাদিসুর বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকায় নাদেরিয়া মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে হাদিসুর মেজো।
হাদিসুর রহমানের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, ‘১২ দিন পর সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ভাইয়ার মরদেহ হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। এরপর মরদেহ নিয়ে সরাসরি নিয়ে সরাসরি গ্রামের বাড়িতে রওনা দেবো।’
রবিবার (১৩ মার্চ) সকালে হাদিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি করে রাখা হয়েছে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে বীরের মতো প্রাণ হারানো হাদিসুরকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে আসা লোকজন যেন কোনও ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই তাকে দেখতে পারে এজন্য নেওয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি। এ ছাড়া তার বাড়ির উঠানে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা, বসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে চেয়ার।
হাদিসুর রহমানের চাচা ও বেতাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, ‘রবিবার হাদিসুরের মরদেহ বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সে অনুযায়ী আমরা সোমবার বাদ আছর গ্রামের বাড়িতে তার জানাজার নামাজের সময়সূচি ঠিক করি। কিন্তু ভারি তুষারপাতের কারণে ইস্তাম্বুল থেকে বাংলাদেশে হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে আসা ফ্লাইটটি বাতিল হয়ে যায়। সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার দুপুরে মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হাদিসুরের নিজ বাড়ির মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে দাদা আতাহার উদ্দিন হাওলাদার এবং দাদি রোকেয়া বেগমের কবরের পাশেই তাদের আদরের নাতি হাদিসুরকে সমাহিত করা হবে।
হাদিসুর রহমানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার ছেলে দেশের জন্য মারা গেছে। তাকে শেষবারের মতো দেখতে পাবো তা ভাবিনি। ক্ষতি যা হওয়ার হইছে, এখন আমরা ছেলের লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
হাদিসুরকে হারানোর শোক বয়ে নিয়েই তাকে দাফনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে তার পরিবার। এখন অপেক্ষা কেবল তার মরদেহ বুঝে পাওয়ার।