শেবাচিমে চিকিৎসক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পরিচালকের বিরুদ্ধে

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মেডিকেল কলেজের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক শিক্ষকদের গালাগাল দেওয়া এবং লাঞ্ছিত করার অভিযাগ উঠেছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট ও যন্ত্রপাতি মেরামতের ব্যাপারেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। রেডিওলজি বিভাগ, গাইনী, মেডিসিন, আইসিইউ, সার্জারি, এবং হৃদরোগ বিভাগের একাধিক চিকিৎসক ওই অভিযোগ করেছেন।
তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন চিকিৎসক সংকট এবং যন্ত্রপাতি মেরামতের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, সাধারণ রোগীদের পক্ষ অবলম্বন করলে তো ডাক্তারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মেডিকেল কলেজের বর্তমান এবং সাবেক অধ্যক্ষকে অপদস্ত করার অভিযোগ রয়েছে। গত মঙ্গলবার রেডিওলজি বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপককে গালাগাল ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এই বিষয় নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক এবং শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরিচালকের সঙ্গে স্বাচিব এবং বিএমএর রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় চিকিৎসকরা এব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সরোজিতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। এক পর্যায় তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে গেলে অন্য চিকিৎসকরা সরোজিতকে রক্ষা করেন। বিষয়টি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক পরিষদকে জানানো হয়েছে। শিক্ষক পরিষদ এবং একাডেমিক কাউন্সিলে উত্তোলনের জন্য বলা হয়েছে।
শিক্ষকদের একটি পক্ষ জানিয়েছেন, রেডিওলজি বিভাগে তিনজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে দুইজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেন পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। এব্যাপারে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওই বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরে একজনকে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। গুরুতর রোগী আসলে তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ওই প্রস্তাব দেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হন পরিচালক। ক্ষেপে গিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন। এক পর্যায়ে সে তাকে মারতে উদ্যত হন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. মাকসুমুল হক ভোরের আলোকে অভিযোগ করেন, হাসপাতালের পরিচালক রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের সঙ্গে দুর্বাবহার করেছেন এমন নয়। তিনি অনেকের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি আমার সঙ্গেও একবার অশোভন আচরণ করেছেন। এতটা খারাপ ব্যবহার মেনে নেওয়া কষ্টকর। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর একটা সমাধান হওয়া জরুরী। শুনেছি এব্যাপারে শিক্ষকরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সার্জারি, হৃদরোগ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আলোকে বলেন, বর্তমান পরিচালক ডা. বাকির হোসেন হাসপাতাল চালাতে ব্যর্থতার পরিরচয় দিচ্ছেন। হাসপতালের অধিকাংশ বিভাগের মিড লেভেলে কোন ডাক্তার নেই। ওইসব বিভাগের অবস্থা ভয়াবহ। চিকিৎসা দিতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন চিকিৎসকরা। এটা দেখার দায়িত্ব পরিচালকের। কিন্তু সেব্যাপারে তিনি কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। হাসপাতালের যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলো মেরামত হচ্ছে না। কিন্তু তিনি কথায় কথায় চিকৎসক ও অধ্যাপকদের অপদস্ত করছেন। সে কাউকে পরোয়া করে না। সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মাকসুমুল হক, বর্তমান অধ্যক্ষ অসিত দাস, রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সরোজিত, আইসিইউ বিভাগের ডাক্তার নাজিমুল ইসলামসহ অনেক অধ্যাপক ও সহযাগী অধ্যাপকদের অপমান করেছেন পরিচালক ডা. বাকির হোসেন। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এর আগে এমন পরিচালক কেউ আসেনি। সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে পরিচালকের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এটা সুস্থ মস্তিস্কের বিষয় বলে মনে হয় না। বিষয়টি স্বাচিব এবং বিএএমএ নেতাদের জানানোর কথাও বলেছেন তারা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অসিত দাস এব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তবে একজন চিকিৎসককে অপদস্ত করা হয়েছে সেটা তিনি শুনেছেন। এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে সমাধা করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন ভোরের আলোকে বলেন, ডাক্তারদের সঙ্গে মাঝে মাঝে তো সম্পর্ক খারাপ হয়ই। ভুল বোঝাবুঝি তো হতেই থাকে। কেউ কাজ করতে চায় না। সেটা নিয়ে বকাঝকা করতে হয়। রেডিওলজি বিভাগে আল্ট্রাসনো মেশিন চালাতে পারবে না সেটা নিয়ে কথা বললে সমস্যা হবে। ডাক্তার নিয়ে বসিয়ে রাখবে অন্য জায়গায় সার্ভিস দিতে পারবো না। সেটা বলা যাবে না? একটু প্রেসার দিলেই আমি খারাপ হয়ে যাই।
তিনি আরো বলেন, জনগণের সেবা দিতে গেলে ডাক্তারদের কাছ থেকে আমার দূরত্ব হবেই। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে ডাক্তারদের প্রিয় হওয়া যাবে না। এসব বিষয় আমি যদি লেখি তাহলে তো দুদকে তাদের তলব করবে। মিড লেভেলে ডাক্তারদের নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। এব্যাপারে আজও ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। অকেজো যন্ত্রপাতি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।