শেবাচিমে ডাক্তার-আয়াদের কমিশন না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র সাদিক

শেবাচিমে ডাক্তার-আয়াদের কমিশন না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র সাদিক

বরিশালে রোগীর রোগ পরীক্ষার জন্য ডাক্তারদের কমিশন না দিতে ডায়ানস্টিক ও প্যাথলজি মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ডাক্তার ও আয়া-বুয়াদের রোগীর রোগ পরীক্ষার কোন কমিশন না দিতে ওই নিদের্শনা দেন মেয়র সাদিক। বিষয়টি তদারকি করতে ডাগায়নস্টিক ও প্যাথলজি মালিকদের জরুরী একটি কমিটি গঠন করে তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মেয়র নিজে ওই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীর কালীবাড়ি রোডে সিটি মেয়রের বাসভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই নির্দেশনা দেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। সভায় উপস্থিত একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক ওই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 
 জানা যায়, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টার থেকে ডাক্তার, আয়া-বুয়াদের কমিশন আদায়ের রেওয়াজ বহু পুরনো। সাম্প্রতিক সময়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন আদায়ের ঘটনা নিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে। এ ঘটনার পর ডাক্তার এবং আয়া-বুয়াদের প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার কমিশন আদয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের সামনে বান্দ রোডের ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি মালিকদের জরুরী তলব করে নিজের বাসায় ডেকে পাঠান বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। পরে ডায়াগনস্টিক মালিকরা মেয়রের বাসায় তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় সভায় মেয়র ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের কাছে ডাক্তার ও আয়া-বুয়াদের কমিশন বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে চান। 
সভায় অংশগ্রহণকারী ডায়াগনস্টিক মালিকরা মেয়রকে বলেন, রেফারেন্স ডাক্তার, ট্রলিতে করে রোগী নিয়ে আসা আয়া-বুয়া এবং রিপোর্টেড ডাক্তারকে পরীক্ষা ফি’র মোট ৮০ ভাগ অর্থ কমিশন দিতে হয়। বাকী ২০ ভাগ অর্থে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর রি-এজেন্ট, ক্যামিক্যাল, ঘরভাড়া, কর্মচারী বেতন এবং বিদ্যুত বিল দিয়ে মালিকরা চলতে পারছে না। ডায়াগনস্টিক মালিকদের দেয়া বক্তব্যে মেয়র বিস্ময় প্রকাশ করেন। কোন কোন ডাক্তার ও আয়া-বুয়া রোগীর রোগ পরীক্ষার কমিশন আদায় করেন তা বিস্তারিত অবগত হন মেয়র। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ইন্টার্ণ চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের কেউ কোন উপদ্রব করেন কিনা তাও জানার চেষ্টা করেন মেয়র। 

মতবিনিময়ের এক পর্যায়ে মেয়র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের কোন ডাক্তার এবং আয়া-বুয়াকে রোগীর রোগ পরীক্ষা বাবদ কোন কমিশন না দেয়ার জন্য ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি মালিকদের কঠোর নির্দেশনা দেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ডাক্তার ও আয়াদের কমিশন বাণিজ্য কঠোরভাবে রুখতে বান্দ রোডের (মেডিকেলের সামনে) ডাগায়নস্টিক ও প্যাথলজি মালিকদের জরুরী ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠনের তাগিদ দেন তিনি। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন মেয়র নিজেই।

কমিশন বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধে ডাগায়নস্টিক ও প্যাথলজি মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিয়মতি পরিদর্শক রেখে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোন ধরণের উৎপাত করলে বিষয়টি তাৎক্ষণিক সিটি মেয়রকে জানাতে বলেন সংশ্লিষ্টদের। সভায় উপস্থিত একাধিক ডায়াগনস্টিক মালিক এই তথ্য জানিয়েছেন।  

মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র ছাড়াও ডায়াগনস্টিক মালিক হাবিব মিয়া, মাহবুব মিয়া, কাজী মিরাজ, বেলায়েত হোসেন, মো. ওয়াহিদ, মো. শামীম, মো. শাহিন, মো. দুলালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

ডাক্তার ও আয়া-বুয়াদের রোগীর রোগ পরীক্ষার কমিশন আদায় বন্ধ এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সিটি মেয়রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন নগরীর বিশিষ্টজনরা।

সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ’র মুঠোফোনে বলেন, করোনাকালে ডাক্তারদের ভূমিকা প্রসংশনীয়। দুই-একজন ডাক্তারের কারণে বরিশালের ডাক্তার সমাজের বদনাম কোনভাবে কাম্য নয়। তিনি ডায়াগনস্টিক মালিকদের বক্তব্য শুনেছেন। কোন কোন ডাক্তার কমিশন নেয় এবং ছাত্রলীগের কেউ এর সঙ্গে জড়িত কিনা সব কিছু অবহিত হয়েছেন। যেসব ডাক্তার কমিশন নেয় তাদের বিরুদ্ধে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলের পরিচালক এবং তার (মেয়র) কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। ডায়াগনস্টিক মালিকরা লিখিত অভিযোগ দিলে আলোচনা করে এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন মেয়র।