শেবাচিমের ইউরোলজি বিভাগে ভোগান্তি

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পুরাতন ভবনের চার তলায় ইউরোলজি বিভাগের তিন নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডে গত ২ দিন ধরে ডাক্তার আসে নি বলে অভিযোগ ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনের। ওয়ার্ডের সকল বেডেই রোগী চিকিৎসাধীন। তবে তার অধিকাংশ রোগীর অপারেশনের (ওটি) জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়। প্রতি সপ্তাহে তিন-থেক চারজনকে অপারেশন করা হয়। তবে রোগীর ওটির প্রয়োজনীয় ওসুদসহ জিনিসপত্র বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি রোগীর স্বজন সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সময় দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডে ১৮ টি বেডে ১৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। তার মধ্যে সদ্য অপারেশনের রোগীও আছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) থেকে ওই রোগীরা ডাক্তারের দেখা পায় নি। এতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ওই ওয়ার্ডের দ্বায়িত্বরত নার্সরাও।
সরেজমিনে হাসপাতালে
সদ্য কিডনি রোগে অপারেশন করা রোগী বরিশাল নগরীরর রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আসিফ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি গত জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে এখানে ভর্তি হয়েছি। আমাকে ভর্তির এক সপ্তাহ ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। এর পরে প্রায় ১ মাসের বেশি এই বেডে শুয়ে বসে কাটিয়েছি অপারেশনের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য। পরে গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) আমার অপারেশন হয়। অপারেশনের পরে আমার বেডে শেষ ডাক্তার আসছে গত শুক্রবার ১০ মার্চ। তার পর এখন দুই দিন পার হয়ে গেছে, ডাক্তারের কোনো দেখা পাই না। তবে শুনেছি আমাদের যে ডাক্তার দেখে তিনি নাকি অসুস্থ। তবে অন্য কোনো ডাক্তারও আসেনি।’
আসিফের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘অপারেশন করার পরে আমার ছেলে প্রচন্ড কাশি। তিন দিন ধরে ডাক্তার আসে না। আমার ছেলের অপারেশন হইছে, এখন এক এক সময় এক এক সমস্যা দেখা দেয়। কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারি না। দ্বায়িত্বরত নার্সদের কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে ডাক্তার এসে দেখবে। কিন্তু ডাক্তার তো আসে না।’
হাসপাতাল থেকে ওসুদ পায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অপারেশনের সব কিছু বাহির দিয়ে কিনতে হইছে। ওটিতে ডুকিয়ে সব কিনে আনতে বলছে। আর এখনও বাহির দিয়া ওসুদ কিনি।’
এদিকে পাশের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন লুৎফুন্নেছা ডাক্তার না আসার বিষয়টি জানতে পারলে আসিফকে সাহায্য করতে রোববার পরিচালক বরাবর যায়। সেখানে পরিচালককেও না পেয়ে কোনো সুফল পান নি তিনি। উপরন্তু অন্য নার্সরা বিষয়টি জানতে পারলে তার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে জানান তিন।
ওই ওয়ার্ডের পাশের এক রোগী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘আমি এখানে গত ২৪ দিন ধরে ভর্তি হয়ে আছি। আমার অপারেশন হবে। কিডনিতে পাথর হয়েছে। কিন্তু এখনো সিরিয়াল পাই নি। এখানে ভর্তি হয়ে সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ৩ থেকে ৪ জন রোগীর অপারেশন হয়। এখানের ডাক্তার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার তিনি অপারেশন করেন। শুনেছি তিনি অসুস্থ, তাই আসতে পারে নি।’
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘জাহাঙ্গীর স্যার অসুস্থ তাই সে আসতে পারে না। কিন্তু হাসপাতালের তো দ্বায়িত্ব আছে। অন্য কোনো ডাক্তার দিয়ে হলেও একটা রাউন্ড তো দেওয়াতে পারে। আমরা তো চিকিৎসা নিতে আসছি। গত তিন-চার দিন ডাক্তার আসে না। আমার থেকেও এখানে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ রোগী আছে। তাদের অবস্থাও খারাপ।
ইউরোলোজী বিভাগের তিন নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডের জুনিয়র স্টাফ নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘ওয়ার্ডের ডাক্তার কেন নেই এই বিষয়ে অফিসিয়াল কোনো নোটিশ আমরা পাইনি। আমরা রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ইউরোলজি বিভাগের রেজিষ্টার ডা. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এই বিভাগে আমি আছি রেজিষ্টার হিসেবে। আরো দুই জন আছে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর; তার মধ্যে একজন ১ মাসের ছুটি নিয়েছে। মোট এই তিন জন। আর একজন আরএস আছে, সে আউটডোর দেখে। তবে আমাদের এখানে এই তিন জন ডাক্তার দিয়ে বিভাগ চালানো যায় না। গত শুক্রবার আমি বাইক এক্সিডেন্ট করি। তাই এখন এক সপ্তাহের রেস্টে থাকতে হবে। আমার অনুপস্থিতিতে ইন্টার্নি ডাক্তাররা দেখে। ওদের সাথে আমার ফোনে যোগযোগ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘তিন নম্বর ওয়ার্ডে (পুরুষ ইউরোলজি বিভাগ) ১০ টি পুরুষ বেড এবং দশ নম্বর ওয়ার্ডে (মহিলা ইউরোলজি বিভাগ) ১০ টি মহিলা বেড আছে। তবে রোগীর চাপে মোট ৪০ টি রোগী থাকে সবসময়। প্রতি বৃহস্পতিবার তিন-চারজনের ওটি হয়।’
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) এর সহকারী পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ডাক্তার না থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। মাত্র আপনার কাছে শুনেছি। তবে ওই ওয়ার্ডে ডা. জাহাঙ্গীর সাহেব ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসকরা রয়েছেন, তারা এই বিষয়টি আমাদের জানাননি। দ্রুত ইউরোলজি বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘ ইউরোলজি বিভাগে সপ্তাহে একদিন ওটি পায়। কারন একটি ওটিতে অন্যনান্য সার্জারিও করা হয়। তারা ভাগে একদিন পায়। এছাড়ও এই বিভাগের ওটি করতে অনেক সময় লাগে। প্রতিদিন দুইটা তিনটার বেশি করতে পারে না। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। সেই কারনে রোগীদের সিরিয়াল পেতে সময় লাগে বেশি। আমরা যদি সপ্তাহে আরো দুই-তিন দিন রোগী অপারেশন করতে পারি তাহলে রোগীদের চাপটা একটু কমবে। সে জন্য হাসপাতালের আরো ভবন প্রয়োজন বলে জনান তিনি।