সংক্রমণের হার ৪৭ শতাংশ, চিকিৎসক সংকটে সাতক্ষীরা

সংক্রমণের হার ৪৭ শতাংশ, চিকিৎসক সংকটে সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরাতে কিছুতেই কমছে না করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিনই করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা। এ অবস্থায় জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। সিনিয়র, জুনিয়র এবং সহকারি সার্জনসহ মোট ৫৮টি পদের বিপরীতে ২৭টি শূন্য পদ নিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনা রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ৯০ আসন থেকে করোনা রোগীর জন্য ১৫৬ আসনে উন্নীত করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা দুই এক দিনের মধ্যে আরও ৩৫ আসনে উন্নীত করার চিন্তাভাবনা করছে মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পিসিআর ল্যাবের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৮ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে নেমে ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ২ হাজার ৬৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও বাসা বাড়িতে মোট ৮৭২ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর  উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ২৫৫ জন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ৩৫ শয্যার একটি করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে ভেল্টিলেশন না থাকায় সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪১ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে পজেটিভ রোগীর সংখ্যা ২৪ জন। পরিস্থিতি সামাল ১৯০ জনের নার্সের বিপরীতে ১৫টি সিনিয়র নার্সের পদ শূন্য থাকায় গত দুই দিনে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৩৯ জন নার্সকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টিং করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ হাসপাতালে মোট তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। আসন সংকুলানে অনেকে বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

২০১৭ সালের ২২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে করোনা পজেটিভ রোগী সনাক্তের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৫ জন ল্যাব সহকারী এর মধ্যে ১৩ জনের করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় ২ জনকে দিয়ে চলছে পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম। ফলে ৪০ জনের বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসব কারণে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে এসে নমুনা গ্রহণ না করায় প্রতিদিন অনেকে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে গতকাল ১৬ জুন সকাল ৯টায় ভর্তি হওয়া সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের সেবা পদ (৮০) বেড না পেয়ে হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে। গত চার দিন ধরে করোনা ইউনিটের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন যশোর জেলার কেশবপুরের বাসিন্দা আব্দুল ওহাব জানান, প্রতিদিনই করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেড না থাকায় অনেকে ফিরে গেছে। ডাক্তার ও নার্স কম থাকায় পরিদর্শনে কম আসছে। তবে বর্তমানে চিকিৎসা নেওয়ার পর তার পূর্বের চেয়ে একটু শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ কুদরত-ই-খোদা জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে করোনা রোগীসহ সকল ধরনের রোগীর চাপ বেড়েছে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রায় তিন শতাধিক রোগীর চিকিৎসাধীন রয়েছে। ইমারজেন্সি, সিসিইউ, আইসিইউ, ডায়ালাইসিস, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থপেডিক্স, শিশু, শিশু সার্জারিসহ মোট ১৮টি ইউনিট চালু আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু থাকার পাশাপাশি এখানে হাইফ্লোন্যাভেল ক্যানোলার সংখ্যা ৩৮টি। আই.সি.ইউ বেড রয়েছে ৮টি। করোনা রোগীদের জন্য পর্যায়ক্রমে ৯০ থেকে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬৫টি আসনে উন্নীত করা হয়েছে। জনবল সংকটে রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সিনিয়র, জুনিয়র এবং সহকারী সার্জনসহ মোট ৫৮টি পদের বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ ২৭টি শূন্য পদ নিয়ে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। ৫০ জনের বিপরীতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে মাত্র ২০ জন। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ১৫টি সিনিয়র নার্সের পদ শূন্য থাকায় গত দুই দিনে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৩৯ জন নার্সকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ইতিমধ্যে শূন্য পদে জনবল চেয়ে ১৫ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর তিনি পত্র প্রেরণ করেছেন।

এদিকে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখানে ৩৫ শয্যা নিয়ে একটি করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে। ভেল্টিলেশন না থাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে এটি খুব শীঘ্রই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে এখানে ৩০ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৯ জন করোনায় আক্রান্ত।

তিনি আরও জানান সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ২৭টি পদের বিপরীতে সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, চক্ষু, এ্যানেসথেশিয়া, গাইনিসহ জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, ইএনটি, প্যাথলজি, গাইনি, সার্জারি, কনসালটেন্ট এবং মেডিকেল অফিসারসহ মোট ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ১ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ ৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৩ জন।

তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা হাসপাতাল হলেও ৫০ শয্যার লোকবল নিয়ে কোনোভাবে চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম।