সংস্কৃতির দিকে নজর দিন

বলা হয় হাজার বছরের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা আজকের বাংলাদেশ। তবে ইতিহাস বলে বাঙালিদের রয়েছে ৪ হাজার বছরের ইতিহাস। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসের মূল উপজিব্য তার সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিই আমাদের সত্যিকার মানুষ হিসেবে বাঁচতে শিখিয়েছে। বৃটিশ তাড়ানো থেকে শুরু করে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি কিংবা লালন করে করে হিংসা বিদ্বেষ ও যুদ্ধ থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতিবান মানুষরা কখনো নেতিবাচক হয় না। তারা সব সময়ে প্রগতির পথে হাঁটতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আমাদের ভাষা সংগ্রাম, মুক্তি সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক সকল পর্বে এদেশের সংস্কৃতি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। অথচ সংস্কৃতির বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। এই ধারার অবসান হওয়ার খুবই জরুরী। সেজন্য অবশ্যাই সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। দরকার সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা। তাই, সংস্কৃতির দিকে নজর দিতেই হবে। আলোকিত মানুষ ও দেশের দৃঢ় ভিত্তির জন্য সংস্কৃতির দিকে নজর দিন।
আমদের দেশে সংস্কৃতিকে দেখা হয় অনেকটা ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মত। ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা সবল দুই বাচ্চার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠে না। কোনমতে তার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে চলতে হয়। তেমনি সংস্কৃতিও সবল অর্থনীতির দুর্বল চিন্তার ফসল হয়ে কোনমতে লড়াই করে করে প্রদীপ শিখাকে জ¦ালিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলে। অথচ রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সবাই মুখে বলেন, ‘সংস্কৃতি না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না।’ এটা কেবল কথার কথা হয়ে থেকে যাচ্ছে। সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাই বেশি লক্ষ্য করা যায়। একদিকে সংকীর্ণ চিন্তা দিয়ে সংস্কৃতি থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা নিরন্তর। সেই চেষ্টার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাল মিলিয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী বিশেষ করে ৭৫ পরবর্তী দেশের সব সরকার। বর্তমান সরকারকে সংস্কৃতি বান্ধব বলা হলেও তাদের সময় একটি চক্র সংস্কৃতি ধ্বংসে বেশি আষ্ফালন করছে। তাদের আষ্ফালনে পাঠ্য বইয়ে পরিবর্তন এসেছে। স্কুল থেকে সংস্কৃতির অংশ চারুকলা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংগীত বিভাগও নেই। সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা কমছে তার বড় প্রমাণ জাতীয় বাজেট। জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ মোট বাজেটের এক ভাগও নয়। সংস্কৃতির জন্য মাত্র এক ভাগ বাজেট বরাদ্দের জন্য উদীচী সহ দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা দাবি তুলেছে।
ধর্মের নামে দেশে বাংলা ভাইর উত্থান হয়েছে। দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা হয়েছে। বিচারকসহ অনেক সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে তাদের বোমা হামলায়। ধর্মীয় এই উন্মাদরা যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা চালিয়েছে, রমনার বটমূলে বোমা হামলা করেছে, সিপিবির সম্মেলনে বোমা হামলা করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে অনেক মানুষ হত্যা করেছে। এরপরও থেমে থাকেনি। একই ধর্মীয় উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে নারকীয়ভাবে মানুষ হত্যা করেছে। মৌলবাদী এই চক্র দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মানুষ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। মৌলবাদী ওইসব গোষ্ঠী ওঁৎ পেতে আছে, সময় বুঝে আবারও ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেদিকে কঠোর দৃষ্টিপাত না করলে অবস্থা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
কেবল ধর্মের নাম ব্যবহার করে যত মানুষ হত্যার ঘটনা, অগ্নি সংযোগ, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে তার হিসাব দেওয়া কঠিন। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চা করতে গিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ, হানাহানি, মারামারি, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের একটি ঘটনাও কেউ দেখাতে পারবে না। কারণ সংস্কৃতি মানুষকে বিকশিত করে। সত্যিকার মানুষ হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। তারা মানুষের মধ্যে সৃষ্ট গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করে। তারা র্ধর্মীয় বিভেদ দূর করতে কবিতা, গান, নাটক রচনা করে।
অঢেল টাকার মালিক, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংকের টাকা লোপাট, বিদেশে টাকা পাচারের যত ঘটনা, তার একটিও কি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষে আছে? নাই। কারণ তারা নিজের অর্থবিত্তের পরিবর্তে দেশের সমৃদ্ধি এবং বিশ^ শান্তির পক্ষে কাজ করেন। আর সেজন্য তারাই সবসময় অবহেলিত অবস্থায় থাকেন। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে সত্যিকার মানবিক মানুষ পাওয়া কষ্ট হয়ে যাবে। সুন্দর আগামীর জন্য সংস্কৃতি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ান। যারা দেশ এবং বিশ^মানবতার কথা ভাবেন, তাদের কথা ভাবুন।