সত্যেন সেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

সত্যেন সেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

বাংলাদেশ সৃষ্টির বহুকাল আগে সাধারণ মানুষের কল্যাণ এবং কৃষকদের ন্যয্য দাবি আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন শিল্পী সংগ্রামী, সাংবাদিক সাহিত্যিক সত্যেন সেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষদের সংগঠিত করে মুক্তিসংগ্রামের পথে নিয়ে গেছেন শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চশ বছরে দাঁড়িয়ে বলতে হয় সত্যেন সেন হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, সত্যেন সেন-ই বাংলাদেশ।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় সত্যেন সেন-এর ৪২তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল নগরের উত্তর মল্লিক রোডে উদীচী ভবনে আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে উদীচী বরিশাল জেলা সংসদ।

‘মানুষেরে ভালোবাসি এই মোর অপরাধ, হাসিমুখে তাই মাথা পেতে নেই দুঃখের আশীর্বাদ...’ ওরে ওরে বঞ্চিত সবহারা দল, শোষনের দিন হয়ে এলো ক্ষীণ, নবযুগ আসে চঞ্চল...’ অথবা ‘মারো জোয়ান হেইয়ো মারো কষে টান, তালে তালে ফেলো বৈঠা নদীতে উজান...’ হ্যা, এমন উজান বেয়ে বেয়ে বাংলাদেশকে হাসি গানে মুখরিত অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় বিনির্মাণে কাজ করা মানুষ শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেন। যিঁনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন প্রগতিশীল গণসাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী। তাঁর গড়া উদীচী দেশে এবং দেশের বাইরে ৩৭৬টি শাখা রয়েছে। মহাকালের মহামানব সত্যেন সেন-এর ৪২তম মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে উদীচী বরিশাল। শিল্পী সংগ্রামী, সাংবাদিক সত্যেন সেন এর মৃত্যু বার্ষিকী আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন সত্যেন সেনকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরা একান্ত জরুরী।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সত্যেন সেন-এর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল, মুকুল দাস, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ^নাথ দাস মুনশী, বরিশাল নাটক সভাপতি কাজল ঘোষ, সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন লাবু, সরকারি বরিশাল কলেজের অধ্যাপক , বরিশাল নাটকের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক ¯েœহাংশু কুমার বিশ^াস।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের আগে থেকেই একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে উদীচী। সত্যেন সেন একদিকে যেমন কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার জন্যই উদীচী প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত উদীচী মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে গান গেয়ে গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবীত করেছে। উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সতেন সেন, রনেশ দাস গুপ্ত, মুকুল সেনরা মুক্তি সংগ্রামে সরাসরি অংশ নিয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। যে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে। সত্যেন সেন-এর বাংলাদেশে, প্রগতিকমী বাংলাদেশের জন্য যা অশনিসংকেত। আমাদের সত্যেন সেনের আদর্শে গড়ে তোলা উদীচীর পতাকা আরও দৃঢ়ভাবে ধারণ করে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের মাঝে সত্যেন সেনকে তুলে ধরতে হবে। যাতে বাংলাদেশটা সঠিক পথে সামনের দিকে যেতে পারে।পরে সত্যেন সেন এর লেখা কয়েকটি গান পরিবেশন করেন বিশ^নাথ দাস মুনশীসহ উদীচীর শিল্পীকর্মীরা।