সমুদ্র উপকূল হওয়ায় দক্ষিণে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাস

উপকূল এলাকা হওয়ায় বারবার বরিশালসহ দক্ষিণ জোনে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আঘাত হানছে। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং পরিবেশ ধ্বংসের কারণেই উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ছে ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৯ জেলা সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি হওয়ায় এই অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়প্রবণ। তাদের মতে দুর্যোগ ঘটছে উন্নত দেশগুলোর কারণে, আর ক্ষতির মুখে পড়ছে দরিদ্র দেশ। তাই দুর্যোগ কমাতে গোটা বিশ^কে নজর দেওয়া জরুরী।
বাংলাদেশে সংঘটিত সুপার সাইক্লোনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে উপকূল এলাকা। ১৯৭০ সালের প্রলয়াংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহাণিও ঘটে। রাস্তাঘাট, স্থাপনাসহ সম্পদের ক্ষতি পুশিয়ে ওঠতে অনেকটা সময় যায়। পরবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া সুপার সাইক্লোন সিডর, আয়লা এবং সর্বশেষ সিত্রাং-এ প্রাণহানির চেয়ে সম্পদ ও অবকাঠামোর ক্ষতি বেশি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সম্পদের ক্ষতি কমানো যাচ্ছে না। সেজন্য পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হয়। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন কাজ না করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
তাদের মতে উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি পরিবেশকে ডিস্টার্ভ করা হয়। তার সঙ্গে যদি টেকসই উন্নয়নের দিকে না যাওয়া যায়, তাহলে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাস আরও বাড়বে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলার সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায়ও নজর দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বঙ্গোপ সাগরে ঘন ঘন নি¤œপাচ, সুপার সাইক্লোন, ঝড় জলোচ্ছাস হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক এলাকার তাপমাত্রা বাড়ছে, যা বায়ুমন্ডলের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন আনছে। দেখা দিচ্ছে অনাবৃষ্টি অতিবৃষ্টি ও ঋতু পরিবর্তনের খেলা। মনুষ্যসৃষ্ট কার্মকা- ঘন ঘন দুর্যোগ ঘুর্ণিঝড়ের জন্য দায়ী। নাব্যতা হারিয়ে ফেলে যেমন নদী ভাঙন হয়, তেমনি উজানের পানি ধারণ করতে না পেরে সেটা সমুদ্রের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। পলিসহ ওই পানির চাপ পড়ে উপকূলে আঘাত হানে এবং ভাঙন সৃষ্টি করে।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, বরিশাল অঞ্চল এমনিতেই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চল। প্রতি বছরই প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত করে। তার সঙ্গে জলোচ্ছাসও হয়। এবছর সিত্রাং এর প্রভাবে ২৪ ঘন্টায় স্মরণকালে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ৩২৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপকূল বিদ্যা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, তিনটি বিষয়য়ের ওপর ভিত্তি করে কোস্টাল বা উপকূল অঞ্চল ধরা হয়। দেশের ১৯টি জেলা সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় এর আতায় পড়েছে। তাই দক্ষিণের এই অঞ্চলে বারবার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের কবলে পড়ছে। তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছাসের জন্য কেবল জলবায়ুর পরিবর্তন দায়ি নয়, এটা একটা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও বটে। এখান থেকে উত্তেরণের জন্য পরিবেশ ধ্বংস না করে উন্নয়ন করা করা এবং গোটা বিশ^কে এই দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগের কারণে দরিদ্র দেশগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। তাদের পক্ষে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা খুবই কষ্টসাধ্য। দুর্যোগ ঘটছে উন্নত দেশগুলোর কারণে, আর ক্ষতির মুখে পড়ছে দরিদ্র দেশ।