সময় যা বলে সে কি সত্য

আমার এক অগ্রজ প্রায়শই বলেন, ‘শোনো, ন্যায়, নীতি, আদর্শ হ্যানো ত্যান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তো অনেকেই লেখে। একটু চেষ্টা করো দেখো না, পুরানো কিছু মানে, একদিন যা ছিল অথচ আজ তা নাই। সেইসব নিয়ে কিছু লেখা যায় কিনা? যার সঙ্গে যুক্ত ছিল স্থান-কাল-পাত্রের সম্যক সম্পর্ক, তাকে একটু খুঁজে দেখো না কেন? তুমি তোমার দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, স্থান ইত্যাদির ঐতিহ্য আর তার শিকড় খুঁজে দেখবে না? তোমার অতীত আর ঐতিহ্য কেবল হারিয়ে যাচ্ছে বলে চুপ করে থাকবে? ধরো, তুমি যে শহরে বাস করো, তার উৎপত্তি কোথায়, কেমন করে সৃষ্টি হলো সে শহরটা, জানতে ইচ্ছে হয় না? আজকের এই যে আধুনিক শহরটা তার পূর্বের অবস্থান কি ছিলো, কেমন ছিল তার চেহারা? প্রাচীন সেই শহরের বুক চিরে এতগুলো খাল কেমন করে প্রবাহিত হলো ইত্যাদি। আজ অতীত হয়ে যাওয়া সেইসব বিসয়গুলি নিয়ে নিজের দায়িত্বে কিছু লিখতে চেষ্টা করো’।
এ কথাগুলো কি, আদেশ, নির্দেশ, অনুরোধ নাকি সঠিক এক পথের দিশা? তবে ভেবে যে একেবারে দেখিনি, বিষয়টি এমন নয়। বরং বলা যায় স্যালো টিউবওয়েলে সুপেয় পানি পেয়ে গেলে কে আর খুঁজতে যায় ডিপ টিউবওয়েলের পরিশুদ্ধ পানি? এখন মূলত নগদ নারায়ণের যুগ। ঋদ্ধ কোন মানুষ নেই, সেটা বলা ধৃষ্টতা। আছে, তবে কম। এবং এই কম শব্দটি যতটা কম হওয়ার সম্ভব।
এখন আমরা নিজের বাইরে কিছু নিয়ে ভাবি না। তারপরও যারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াণোর চেষ্টা করেন তাদের কাজকে বলি মেকি। অনেকটা মুকুন্দ দাসের এই গানের লাইন গুলোর মত, ‘আছে কি আর এমন ছেলে যার দেশের লাগি কাঁদে প্রাণ। গাইমু কি আর শুনবে কে রে আছে কি আর কারো কান’?
না, নেই। কোথাও নেই, কারো নেই। আমরা মূলত জানিই না অতীত ঐতিহ্য ধারণ করে, লালন করে, সংরক্ষণ করে, কেমন করে একটা প্রজন্মকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে হয়। তবে বিষয়টা যে খুব সহজ, তেমনটাও নয়। এটি ইচ্ছে হলেই বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। যেমন অন্য সব কিছু কিনতে পাওয়া যায়। যদিও তা হলে ভালোই হতো। কেজি কেজি প্রতি ঘরে-ঘরে ইতিহাস, ঐতিহ্য, হেরিটেজ, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাদি শব্দগুলো কিনে সাজিয়ে রেখে সম্পন্ন মানুষদের সারিতে দাঁড়ানো যেতো।
আসলে যে এখনো আসেনি পৃথিবীতে সে কোন ঐতিহ্য বহন করে না। ঐতিহ্য মূলত অতীত নির্ভর। বর্তমান থেকে যতটা দূরে যাওয়া সম্ভব। একদিন দুইদিন ৩৬৫ দিন নয়। একশত দুইশত তিনশত বছর পিছনের সংরক্ষণকে এমনটা ভাবা যেতে পারে। কি এমন আছে আমাদের চারপাশে? যার বয়স অন্তত ৫০ বছর। যাকে আমরা বাঁচিয়ে রেখেছি, সংরক্ষণ করেছি, চেষ্টা করে সঠিক অবয়বে। বুকে হাত দিয়ে এমন কি কিছু বলতে পারি? যেগুলো একে একে মাটির সঙ্গে মিশতে দেখে দেখে মনের তাগিদে সেইসব জিনিষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। বলেছি, না, ভেঙ্গো না ওগুলোকে, গুঁড়িয়েও দিয়ো না। ওরা যেন হারিয়ে যেতে না পারে। রক্ষা করো ওদের। ওরা থাকলে আমি থাকবো, তুমি থাকবে। ওরা বলবে আমাদের পরিচয়। তা না হলে স্বকীয়তার মূল্যমান বুঝবো, বোঝাবো কেমনে? হোক সে কোন বাড়ি, কিংবা অন্য কোন স্থাপত্যশৈলী। হোক সে আদি কোন পথের দিশা কিংবা খাল নদীর গল্প, যা কিনা নিজের শহরের বুক চিরে বয়ে চলেছে। অথবা হতে পারে সে আজকের রাজনীতির পূর্বসূরী। হতে পারে কোন কবিয়াল, গায়ক। যাঁদেরকে বলা যাবে আজকের আমি কিংবা আমাদের পূর্বসূরী।
শতবর্ষী বৃক্ষ ও তার ছায়া যেমন ধীরে ধীরে ইতিহাস হতে থাকে। ঠিক তেমনি কার হাতে সে প্রথম মাটির স্পর্শ করেছিল তাকে খুঁজে আনা, মনে রাখা, খুঁজে দেখা, সেও ইতিহাসের অঙ্গ। আমাদের অস্তিত্বের প্রগাঢ় প্রয়োজন। তাকে বাদ দিলে সঠিক শব্দের মানদ- হারিয়ে যায়। সেই অর্থে এই শহরে আমরা যারা বাস করছি, যে শহরটির অহংকারী নাম প্রাচ্যের ভেনিস। সেই নামের মূল্যমান (?) রক্ষা কী করতে পেরেছি আমরা? অথচ কি সুন্দর অপূর্ব মাধুর্যমন্ডিত এই শহরটা ছিল একদিন। যার বুক চিরে আঁকাবাঁকা শাখা নদী, স্থানীয় নাম যার খাল। সেই খাল অঙ্কিত শহর কোথায় হারিয়ে গেল? কেন এমন করে হত্যা করলাম সেই খালগুলো? কোথায় কার কাছে এই প্রশ্ন করা যায়? আর কেই বা জানে এর উত্তর?
যদি একবার অতীতের পথে হেঁটে দেখি তবে কেমন হয়! সময়টা খুব বেশি দূরে নয়। কত বলবো ৩০ থেকে ৩৫ বছর। কম বেশি ২/৪ বছর এদিক-সেদিক হলেও হতে পারে। সেই সময়টুকুনের মধ্যে আমরাই যা দেখেছি তাকেই তো ধরে রাখতে পারিনি এই শহরে।
শহরের মধ্যেকার প্রত্যেকটি খালের সঙ্গে ছিলো শান বাঁধানো ঘাট। এই পথে চলেছে রিক্সা, গাড়ি, আর তার পাশেই চলেছে বৈঠা হাতে মাঝি। দেখেছি বটতলা মোড় মসজিদের দক্ষিণ পাশে নৌকার সারিতে বাজারের পণ্য। কতশত পসরা দেখেছি কাঠের পুলের পাশে গোলপাতা, সুন্দরী গাইট্ঠা, আখ, গাব কত শত দেশীয় ফল বোঝাই নৌকার সারি। শীতলা খোলার মোড়ের খালপাড়ে শান বাঁধানো ঘাটে বসে বড়শিতে মাছ ধরতো এক বুড়ি। আজ আর মনে নেই তার নাম। শুধু মনে পড়ে খালুইয়ে লাফানো কৈ, শিং, মাগুর, চ্যাং, পুঁটি আর শোল মাছের কথা। এ সকলই আজ অতীত দিনের ছবি হয়ে গেছে। সেই কাঠের পুলটির অবয়ব যদি ঠিক আগের মতোই রাখা যেত, তবে কি ভালোই না হতো। আজ যে এই শহরের এত চাকচিক্য, এতো পরিবর্তন, তারও একটা যথার্থ অর্থ হতো। পুরাতনকে বাদ দিয়ে যে নতুন, সে কখনোই সুখকর হয় না। ইতিহাস সেই কথায় সাক্ষ্য দেয় না।
পুরাতন-এর যত্নে যে যত বেশি যত্নবান, তাদের সৃষ্টিই সবথেকে বেশি উজ্জ্বল, স্থায়ী। মাটির নিচে হারিয়ে যাওয়া শত শত বছর আগের শহর একটা একটা বালু সরিয়ে মানুষ আবিষ্কার করছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বুঝিয়ে দিচ্ছে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাকে কেমন করে লালন করতে হয়। আমরা পারি না, পারতে ইচ্ছাও করি না। আমরা পারিনি আজ অবধি একটি নদী, যার নাম ধানসিঁড়ি, তাকে খুঁজে দেখতে! জীবনানন্দ দাশ যাকে বিশ্ব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। না, আমরা সবাই মিলে গিয়ে দাঁড়াইনি তার পাশে। মানুষ, প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতি সবাইকে একত্র করে বলতে পারিনি, আসুন, আমরা ধানসিঁড়ির শরীর থেকে সকল কাদামাটি সরিয়ে তাকে আপ্লুত করাই বহমাণ স্রোতের অনাবিল স্বাদে। পৃথিবী জানুক, মানুষ আকৃতির কিছু মানুষই এই কাজ করেছে। যদি তেমন উদ্যোগী হতে পারি, তবে আমরাও বেঁচে থাকব ধানসিঁড়ি নদীটির সঙ্গে, জীবনানন্দের পাশাপাশি। জানি সে হওয়ার নয়। তার পরেও অনেকটা এরকমই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিলেন বরিশালের সাবেক জেলা প্রশাসক গাজী সাইফুজ্জামান। মনে রাখার মত অসাধারণ একটি কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি অনুসন্ধানী হয়েছিলেন প্রাচ্যের ভেনিস নামের যথার্থতার স্বাক্ষর রাখার জন্য। তিনিই একমাত্র জেলা প্রশাসক, যিনি দেখাতে পেরেছিলেন কি করে একটি শহরের উৎসের সন্ধানী হওয়া সম্ভব। আজ যে সকল খাল মৃতপ্রায়, এমনকি কোন কোনটা বিলুপ্ত বললেও অত্যুক্তি হবে না। এক এক করে সেই প্রত্যেকটি খালকে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। এই শহরে একদিন বয়ে চলা খালগুলোর প্রত্যেকটির নাম তিনি খুঁজে খুঁজে বের করে নামাঙ্কিত সাইনবোর্ডও লাগিয়ে ছিলেন প্রত্যেকটি খালের উৎসমুখে এবং পথ চলার বিভিন্ন পথে। আমরা এই শহরের মানুষ একজন জেলা প্রশাসকের এমন মহতি উদ্যোগকেও ধরে রাখতে পারিনি। এখন সর্বত্রই শুধু লোহার ফ্রেমগুলো দাঁড়িয়ে আছে, তার সেই অবিস্মরণীয় কর্মের সাক্ষী হয়ে। নামগুলো কোথায় হারিয়ে গেছে, আমরা কেউ জানি না তা! আমরা কেউ জানি না।
জেল খাল উদ্ধারকল্পে যে উৎসাহ এবং স্বতঃস্ফূর্ততার জোয়ার এসেছিল, যার ফলশ্রুতিতে জেলখাল কীর্তনখোলার সংযোগস্থল থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছিল। পিলার দিয়ে নির্ধারিত করা হয়েছিল খালের দুই পাড়ের সীমানা। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল খননকাজের। নথুল্লাবাদ পয়েন্টে শুরুও হয়েছিল খননকাজ। তারপর হঠাৎ এক রাজনৈতিক দুর্বিপাকে সংক্রামিত হয়ে পড়েন জেলা প্রশাসক। পরিণামে বরিশাল ছাড়তে হয় তাঁকে। বরিশাল এক অভূতপূর্ব অবিস্মরণীয় উদ্যোগচ্যুত হয়। এভাবেই, ঠিক এভাবেই আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু রসাতলে পাঠিয়ে দেই। অথচ এই খালটি যদি পুনরুদ্ধার করে জল প্রবাহ চলমান রাখা সম্ভব হতো তাহলে এই শহরের এক অসাধারণ চিত্র নুতন করে দেখতে পেতাম আমরা। হলো না। কাদম্বিনীর মত মরিয়াই জেলখালকে প্রমাণ করিতে হইল সে মরিয়া গিয়াছে।
কি হতো পুরাতন সেই সরু কাঠেরপুল নামক লোহারপুলটি সংরক্ষণে রেখে দিলে? কি হতো সেই পুলের দুপাড়ে শহর ঐতিহ্যের স্বরূপ গোলপাতা বিক্রির ঘরগুলির স্থান সংরক্ষণ করলে? নতুন এবং সম্প্রসারণ-এর প্রয়োজনে যে কালভার্টটি তৈরি হল, তাতে কি উপকার হয়েছে শহরবাসীর? জেলখানা খালের দুপাশে দশ ফিট করে চাপিয়ে ছোট করে দেওয়া গেছে। হয়তো তারি নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেছে এই পুলের পাশে বাঁধানো ঘাটলাটি। যেখানে বসতো নৌকায় করে আনা নানান সামগ্রীর বাজার। আহা কি সুন্দর।
সুন্দরকে সুন্দর বলে তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে রক্ষা করাকে, ঐতিহ্য লালনের একটা রূপ বলা যেতে পারে। তবে তা কতক্ষণ সম্ভব ব্যক্তি পর্যায়ে? যদি না রাষ্ট্র এমন বিষয়গুলোকে মাথায় নেয়। যদি রাষ্ট্র তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, প্রত্নতত্ত্বের মত বিষয়গুলোকে রক্ষায় সচেষ্ট হয়। তবেই এমন বিষয়গুলো রক্ষিত হবে, রক্ষা পাবে। তা যদি না পারি তবে ঘর ছেড়ে পরের সুন্দর দেখতে ছুটে বেড়াবো। দেখতে যাব আইফেল টাওয়ার, বিগ বেল, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, তাজমহল। দেখতে যাব দিল্লির লাল কেল্লা। আর খোঁজ রাখবো না ঘরের পাশের আরশিনগর, কালিজিরা ব্রিজ অতিক্রম করে, একটু সামনে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সুজাবাদের কেল্লার খবর। যা গেছে, কোন খোঁজ বা কোন সংরক্ষণের উদ্যোগ ছিল না কারো। হয়তো ঠিকঠাক দেখভাল না হলে একদিন মাটিতে মিশে যাবে করাপুরের অপূর্ব সৌন্দর্যের আরেক নিদর্শন মিয়া বাড়ির মসজিদ। যেমন ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি।
তবু কিছুটা মন্দের ভালো, এখনো মাথা উঁচু করে এই শহরে দাঁড়িয়ে আছে পাথরঘাটা কালমেঘার জমিদারদের বাড়িটি। আছে তাদের যথার্থ উত্তরসূরীদের হাতে। তাকিয়ে দেখবার মতো বাড়ি। যদিও সামনে দেয়ালটা একটু বেশি উঁচু হওয়ায় এমন একটি ঐতিহ্যের ধারক এবং অনুপম সৌন্দর্যের নিদর্শন চোখের সামনে থেকেও যেন আড়ালেই। বরিশালের ঝাউতলা প্রথম গলিতে ঢোকার ঠিক ডান পাশের বিশাল বাড়িটি। সামনে দাঁড়ালে এক বিশালত্বে মন ভরে যায়। কি অসাধারণ তার প্রবেশপথ কি অসাধারণ তার নির্মাণশৈলী। হয়তো আছে এর নির্মাণ ব্যয় এর অর্থ আহরণের পিছনেও কান্না। থাকবেই। পৃথিবীর প্রায় সকল সৌন্দর্যম-িত নির্মাণের মূল উপকরণ মূলত কান্নাই। বাহ্যিক আচরণ হয়তো ইট-কাঠ আর লোহা পাথরের রঙের রূপের। যার ভিতরে রয়েছে মানুষেরই ঘাম, শ্রম, কষ্ট এবং কান্না। তবে আজকের দিনেও কি বিষয়টা তেমনই নয়? আছে। শুধু আদল ভিন্ন, রূপ ভিন্ন এই অর্থে পৃথিবীর বিবর্তনের গল্পে খুব একটা ভিন্নতা নেই। অন্তত যার সঙ্গে মানুষের সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং আছে। সুতরাং এ যাবতকালের পৃথিবীব্যাপী যত কিছু সৃষ্টি হয়েছে তার সমস্ত কিছু সংরক্ষিত হয় নাই কোথাও। যার কিছুটা বিলুপ্ত হয়েছে-এর নির্মাতা মানুষ দ্বারা, আর বাকিটা প্রকৃতির নিয়মানুসারে।
তার পরেও আমরা খুঁজবোই সেই আদি অকৃত্রিমতাকে। খুঁজবো আমাদের চারপাশের হারিয়ে যাওয়াকে। পাওয়া যাবে না জেনেও খুঁজবো। খুঁজবো এই শহরের পথ-ঘাট ঘুরে ঘুরে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাড়িটি। আছে কি কোথাও? তার একটি ছবি খুঁজে পাওয়াও এখন খুব ভার। ভারতে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন বাবরি মসজিদটি যেদিন ভাঙা হলো, গুনে গুনে তার পাঁচ দিনের মাথায় প্রথম আঘাত পরল মহাত্মার বাড়িতে। অতিক্ষুদ্র প্রতিবাদ ছিল তাকে রক্ষার। কিন্ত পরিস্থিতি তাকে সে অনুমোদন দেয়নি। রক্ষা হয়নি সাহিত্য সংস্কৃতি শিক্ষা রাজনীতির পরিশুদ্ধ এই মানুষটির বাড়িটি। সেখানে এখন সরকারি বরিশাল কলেজ। কোন চিহ্ন আজ আর অবশিষ্ট নেই কেবল একা ভগ্ন শরীরে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় তমাল গাছটি। আর আছে কলেজ গেটের একপাশে পাথরে খোঁদাই করে লেখা ‘হিয়ার লিভ অশ্বিনী কুমার দত্ত’ নামফলকটি। তবে হ্যাঁ, অবিস্মরণীয় ভাবে বেঁচে আছে তার সত্য, প্রেম, পবিত্রতার আধার ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের অপরূপ নির্মাণশৈলীর মূল স্কুল কাঠামোটি। যার নির্মাণকাল ১৮৮৪ ইংরেজি। যদি এখনো একে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সংস্কারের মাধ্যমে যথাযথ পরিচর্যায় রাখা যায় তবে আরো অনেকদিন বেঁচে থাকবে শতবর্ষ অতিক্রম করা এই ভবনটি। সে নিশ্চয়ই আমাদের জন্য গর্বের। এই শহর সর্বোপরি দেশের জন্য এটি একটি দারুণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগী হওয়া খুবই দরকার। যে উদ্যোগ এখনো আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ব্রজমোহন কলেজের সত্য প্রেম পবিত্রতার আদর্শিক ভবনটি। যদিও পুনর্বার একই নকশায় তাকে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। তবু মন্দের ভালো অবিকল আগেরই মত ঐতিহ্য লালন করেই এখনো সে দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে। পুনঃসংস্কারের এই অসাধারণ কৃতিত্ব অতি অবশ্যই প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ স্যারের প্রাপ্য। ব্যতিক্রমী এজাতীয় কর্মের উদ্যোগীদেরও স্মরণে রাখা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলেও এজাতীয় কঠিন কর্মে কেউ পা বাড়াবে না। চলবে...