সরকারি দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে জুয়ার ক্লাব, মাদক ও জুয়া ঠেকাতে উদ্যোগ নিন

ক্যাসিনোর পর জুয়া ও মাদকের ক্লাবও নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতারা। এমন তথ্য পত্রিকা, টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে। গতকাল বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতার এক ক্লাব থেকে জুয়া খেলার ষড়ঞ্জাম, মাদকসহ ৫জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে নগরের আর এক প্রান্তে সরকারি দলের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে একটি কক্ষ থেকে জুয়ার ষড়ঞ্জাম, নগদ অর্থসহ ৯জনকে আটক করা হয়েছে। এই চিত্র কেবল বরিশালের নয় গোটা দেশের চিত্রই এমন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা না দিলে হয়তো সরকারি দলের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যাসিনো এবং জুয়ার ক্লাবে হানা দেওয়া সম্ভব হতো না। মাদক এবং জুয়া আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারি আর বেসরকারি দল নয়, মাদক ও জুয়া ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে হবে। স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ দিতে এখনই উদ্যোগ সেই নিন।
পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ মাসোহারা নিয়ে তারা ক্যাসিনো, মাদক এবং জুয়ার আসর চালাতে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। ফলে গ্রামের সাধারণ তাস খেলা নগরে এসে জুয়ার কোট, আর এক দুই টাকার ‘চরকা খেলা’ রাজধানী এবং বাণিজ্যিক নগর চট্টগ্রামে তা ডলারে রূপ নিয়ে ক্যাসিনোর কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এই মরন ছোবল থেকে দেশকে কে রক্ষা করবে?
আমরা প্রায়ই দেখি পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। এসব অভিযানে অনেক সময়ই গাজার পরিমাণ ভারী হয়। এর বাইরে ইয়াবা বড়ির প্রাধান্যও লক্ষ করা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই তিন পোটলা গাজাসহ আটকের সংখ্যাই বেশি। মাদকের বড় বড় যে দুই একটি চালান ধরা পরে তা কেবল ভাগ বাটোয়ারায় সমস্যার কারণে ধরা পরে এমন অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ক্যাসিনো ও জুয়ার ক্লাব থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, শত শত কোটি টাকা, জুয়ার ষড়ঞ্জাম উদ্ধার হচ্ছে।
যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে হপ্তা কিংবা মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ, তারাই আবার এসব অভিযাত ক্যাসিনো ক্লাবসহ জুয়ার ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জব্দ করছেন ষড়ঞ্জাম এবং আটক করছেন সরকারি দলের নেতা ও সদস্যদের। প্রশ্ন উঠছে ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার ক্লাব সম্পর্কে কি প্রশাসন আগে কিছুই জানতো না? না কি জেনেও নিজেদের আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে চোখ বন্ধ করে ছিলেন? না কি যারা ওইসব ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের কাছে যাওয়ার সাহস রাখতেন না তারা। না কি দেশের প্রধান নির্বাহীর নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন? আমরা শেষটি বিশ^াস করতে চাই।
আমরা বলতে চাই, পুলিশ ইচ্ছে করলে সব ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখে। কিন্তু তারপরও কেন অপরাধ বাড়ে? কারা এর জন্য দায়ি? কেবল পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এর জন্য দায়ি নয়। এর জন্য দেশের রাজনীতি অনেকাংশে দায়ি। দেশের বড় বড় মাদকের চালান এবং নিয়ন্ত্রকের ঠিকুজি খুঁজতে গিয়ে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সাংসদ, সরকারি দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাদের নাম উঠে আসছে। তার সঙ্গে প্রশাসনেরও। তাই ক্যাসিনো, মাদক এবং জুয়ার বিস্তার ঠেকাতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রযোজন।
কেবল একজন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নয়, ক্যাসিনো, জুয়া এবং মাদক বন্ধ করতে মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং প্রশাসনসহ সবার নির্দেশনা থাকতে হবে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে, সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেই উদ্যোগ এখনই নিন। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবে ধরা দেবে। যার সুফল পাবে দেশের প্রতিটি নাগরিক।