বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, অভিভাবকশূন্য হচ্ছে দেশ

বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, অভিভাবকশূন্য হচ্ছে দেশ

শানিবার মারা গেলেন সংস্কৃতির বাতিঘর, লেখক, সাংবাদিক, বাংলাদেশ বেতারের সংগঠক কামাল লোহানী। এর আগে আমরা হারিয়েছি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। হারিয়েছি প্রযুক্তির কারিগর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে। সাবেক স্বাস্থ্য ও স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহম্মেদ কামরানসহ অনেকে। মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক সচেতন মানুষের চলে যাওয়ায় আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছি। যাঁরা বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে মাতৃভূমিকে রক্ষায় জীবনপন সংগ্রাম করে আমাদের আত্মপরিচয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছেন, সেইসব মানুষের চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। এখনো যাঁরা আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন সেইসব শিক্ষা-সংস্কৃতি, রজনীতির অভিভাবকদের পাশে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো দরকার। নানা শঙ্কার মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাঁদেরও সাহস যোগানো দরকার। তা না হলে আমাদের কঠিন অন্ধকার গ্রাস করবে। আমাদের যেন সেই অন্ধকার গহ্বরের দিকে যেতে না হয়।

অনেকে বলেন, করোনার মহামারীর কারণে আমাদের অগ্রজ সংগঠক ও অভিভাবকদের গ্রাস করছে। কিন্তু সবাই যে করোনায় আক্রান্ত তা কিন্তু নয়। তবে করোনা উপসর্গের ভয়ে অনেক সময় সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনা আমাদের চরম এক ভীতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেই ভীতির কারণেই আমাদের অভিভাবকদের মনোবলকে নাজুক করে দিয়েছে। এর সঙ্গে দীঘদিনের স্বাস্থ্যখাতে অচলাবস্থাও অনেকাংশে দায়ী। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশেষ করে করোনার এই দুর্যোগের সময় পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন না থাকা, আইসিইউ না থাকা এবং একই সঙ্গে দক্ষ জনবল না থাকায় দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনার যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের উচিত স্বাস্থ্যখানের এই অব্যবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটানো। তা না হলে ভবিষ্যতে মানুষের এই মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব হবে না।

একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশিরভাগ সময় নিম্নমানের চিকিৎসাসামগ্রি সরবরাহ করা হয়। এমনও হয়েছে ওইসব মেশিন সরবরাহের পর একদিনও রোগীর সেবায় আসেনি। একদল অসাধু ব্যবসায়ী রাজনীতির অজুহাত দিয়ে ওইসব নিম্নমানের যন্ত্র গছিয়ে দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। একজন চিকিৎসক বলেছেন, হাসপাতালে ভেন্টিলেটর এবং আইসিইউ ইউনিট দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত দক্ষ জনবল দেওয়া হয়নি। ওইসব মেশিন চালানোর জনবল না থাকায় সুবিধা পাচ্ছে না সাধারণ রোগীরা। এটা যে কেবল বরিশাল হাসপাতালের চিত্র তা কিন্তু নয়। সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা কমবেশি একই রকম। ফলে রোগীদের বাইরে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকের দ্বরস্ত হতে হচ্ছে। এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে আমাদের মুক্তি নাই।

আমরা আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। আমাদের অভিভাবকদের চলে যাওয়া নীরবে দেখার কোন মানে হয় না। দেশের স্বাস্থ্যখাতের দিকে নজর দিতে হবে। কোনভাবেই নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যারা নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই চক্রদের পেছনে যারা যাছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ জনবলও সরবরাহ করতে হবে।

করোনার এই মহামারী মোকাবেলায় অবশ্য অবশ্য সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে করোনায় আক্রান্তদের মনোবল বাড়াতে তাদের পাশে সহযোগী হয়ে থাকতে হবে। করোনা হলে রক্ষা নাই, এই ধারণা দূর করতে হবে। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে। এই মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে কেবল প্রধানমন্ত্রী নয়, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সবার সহযোগী ও মানবিক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে কোন মূল্যে এই মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের অভিভাবকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।