সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন না করার দাবি

সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন না করার দাবি


সরকরি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের নামে না করার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সরকারি বরিশাল কলেজের বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কলেজের নাম কোনভাবে পরিরবর্তন না করার দাবি তোলা হয়। করোনা প্রাদুর্ভাব এড়াতে মানববন্ধনে কোন শারীরিক দূরত্ব অনুসরণ করা হয়নি।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, সরকারি বরিশাল কলেজটি মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর অশি^নী দত্তের মূল বাসভবনটি ভেঙে ফেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে কলেজটি অশি^নী দত্তের নামে করার দাবি ওঠে। তবে নানা কারণে নাম পরিবর্তন করা হয়নি। গত বছর অশি^নী কুমার দত্তের জন্মদিনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আবারেনা দাবি তোলা হয়। ওই দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন, কলেজ কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছ। পরবর্তী সময় কিছু করণীয় নির্দেশনা পালন করতে মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চিঠি দেয়। সেই প্রক্রিয়া চলমান আছে। এরপরই হঠাৎ কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কলেজের নাম পরিবর্তন না করার পক্ষে দাবি তুলে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারি বরিশাল কলেজের ছাত্র বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম তালুকদার অনিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক আলম রায়হান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান, সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্রলীগ যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল করিম রেজাসহ অন্যান্যরা। 

মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে বরিশালের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই কলেজের নাম নিয়ে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের নামে কলেজের নামকরনের প্রস্তাব ফিরিয়ে এনে আগের নাম বহাল রাখা না হলে বরিশালের ছাত্র সমাজের মাঝে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে। যা জেলা প্রশাসন সামাল দিতে পারবেন না। কলেজের নাম অপরিবর্তিত রেখে অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের নামে কলেজের ছাত্র হোষ্টেলের নামকরণ কিংবা তার নামে জাদুঘর নির্মাণ করে দেয়ার দাবি জানান তিনি। 
কলেজের সাবেক এজিএস ও জেলা যুবদল সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু বলেন, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, গোলাম মাওলাসহ বিভিন্ন গুণীজনের উদ্যোগে এবং অনুদানে একটি নাইট কলেজের মাধ্যমে বরিশাল কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। কারো নামে এই কলেজের নাম পরিবর্তন হতে পারে না।

কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্লাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে। তবে তাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্বের কোন বালাই ছিলো না। 
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের ভক্ত ব্যাপক জনগোষ্ঠী রয়েছে বরিশালে। প্রতি বছর অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীতে স্থানীয় সুশীল সমাজ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিপ্রেমীরা দাবি তুলে আসছিলেন, অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত কলেজের (সরকারি বরিশাল কলেজ) নামকরণ তাঁর নামে করা হোক। করোনা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের নামে বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের একটি প্রস্তুাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। প্রভাবের আগে কলেজের নাম পরিবর্তনের ওই প্রস্তুাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এখন মন্ত্রণালয় যদি মনে করে কলেজের নাম অশ্বিনী কুমার দত্ত্বের নামে হবে সেটা তারা করবে, অথবা আগের নামেও বহাল রাখতে পারে। এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।

উল্লেখ্য, মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্ত বরিশালে সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, ব্রজমোহন বিদ্যালয়সহ দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক কাজ করেছেন। সরকারি ব্রজমোহন কলেজ অশি^নী কুমার দত্তের বাবার নামে করা হয়। সেখানে ৬৫ একর সম্পত্তি কলেজের নামে তিনি দান করেছেন। এই কলেজের বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। অশি^নী দত্তের বাসভবনে এক সময় বরিশাল নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তী সময় সেটা স্বাভাবিক কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৮৭ সালে কলেজটি সরকারি হয়। শুরু থেকেই বরিশাল কলেজকে অশি^নী কুমার দত্তের নামে নামকরণের দাবি ছিল। সেই দাবির প্রেক্ষিতে বরিশালের সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা কলেজের নাম পরিবর্তন করে অশি^নী কুমারের নামে করার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানায়। পরবর্তী সময় সরকরি বরিশাল কলেজের পক্ষ থেকেও চিঠি দিয়ে সহযোগিতা দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এব্যাপারে মন্ত্রণালয় একটি চিঠিও দেয়। এরপরই সাবেক ছাত্রদের ব্যনারে নাম অপরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন শুরু হয়।