সাধু সাবধান

সাধু সাবধান

তত্তাবধায়ক সরকারের সময় দেশে সেনাবাহিনী একধরণের শুদ্ধাচার চালানোর চেষ্টা করে। যদিও তাদের ওই শুদ্ধাচার নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। অনেকে ১/১১-এর ভূত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তত্তাবধায়ক সরকারের বেশকিছু কর্মকা- সাধারণ মানুষের কাছে বেশ আস্থা জাগিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় লোভের ঢেকুরের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় সেই আস্থায় চীর ধরতে শুরু করে।

ওই সময় অবৈধ সম্পাদ দখল, দুর্নীতির নানা অভিযোগে প্রবীণ অনেক রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। শোনা যায় অনেকের ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালানো হয়েছে। অনেকের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রাজনীতির নামে করা কোটি কোটি টাকার গাড়ি রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়েছে এমন চিত্রও দেখা গেছে। বনখেকো ওসমান গণিসহ অনেক রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতির খেরোখাতা জনতকার সামনে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদের কারণে অনেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। অনেক রাজনীতিবিদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন। মোটকথা রাজনীতিবিদদের ওপর দিয়ে একধরণের ঝড় বইয়ে দিয়েছে ১/১১। অনেক কঠিন সময় পার করে সেইসব রাজনীতিবিদরা আবার গণতন্ত্রের পথে হাঁটছেন।

১/১১-এ যারা জেল-জুলুম ভোগ করেছেন, তদের মধ্যে অনেকেই সেই দুঃসময়ের কথা ভুলে গেছেন। তবে কেউ কেউ যে মনে রাখছেন তার প্রমাণও আছে। কিন্তু সেই সংখ্যা অতি নগন্য। যে কজন মনে রাখছেন, তারা অন্তত পরবর্তী কোন দুঃসময়ে পড়বেন না। কিন্তু যাদের সেই সময়ের স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে, তাদের নিয়ে চিন্তা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

অনেকেই মনে করেন অত বছরের পুরানো ঘটনা মনে করে লাভ কি? এটা সত্যি, দুঃসহ স্মৃতি ভুলে থাকতে পারলে ভালোই হয়। কিন্তু সময়ের কাজের হিসেব যদি ওরকম কোন সময় দিতে হয়, তার হিসাব মেলানো সহজ হয়কি? হয় না। তার প্রমাণও আমাদের সামনে। তাই সুসময়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে কোন দুঃসময়-ই দুঃসময় হতে পারে না। আসলে সময় একটাই। সেটা কালো আর সাদা দুইভাবে ভাগ হয়েছে। কিংবা বলতে পারেন আমরা ভাগ করে ফেলেছি। যারা অনেকটা পরিচ্ছন্ন তাদের কাছে সুসময় এবং দুঃসময় দুটোই সমান।

আপনার-আমার কর্ম আমাকে আমাকে সময়ের দ্বারে নিয়ে যায়। যেমন এই কঠিন সময়ের দ্বারে দাঁড়িয়েছেন আমাদের বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল। জীবনের শেষ বেলায় দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালীন কাজে দুর্নীতি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। এটা কেবল একটি ঘটনা মাত্র। এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে আগে পরে। কখনো টে-ার না করে কাজ করা। কখনো টে-ার হলেও কাজ না করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এসব ঘটনা অনেকটা গাসহা হয়ে গেছে। তারপরও কি শেষ রক্ষা হয়েছে আহসান হাবিব কামালের? না হয়নি। বিএনপির ক্ষমতা। পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে পৌরসভা ও সিটির ক্ষমতায় থাকা। সবই কেবল স্মৃতি হয়ে আছে। তাই সাবধান হওয়া অতি জরুরী। অন্তত কাজের দরপত্র আহ্বান ও সেই অনুযায়ী ন্যুনতম কাজ করলে এই অবস্থা হত না।

কবে সেই পৌসভার চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সময়ে টিএ-টির কাজে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে এতো দিন পর সাজা হবে। এটা কেউ ভাবতেও পারেনি। কারণ যত অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে তা ক্ষমতা দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। আমরা আহসান হাবিব কামালের এই অবস্থা দেখতে প্রস্তুত ছিলাম না। আগামতেও এমন কোন চিত্র দেখতে চাই না। অতএব সাধু সাবধান।