সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কান না দেওয়ার আহ্বান

সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কান না দেওয়ার আহ্বান
গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে প্রিয়া সাহা নামে এক নারীকে নিয়ে। এই নারী না কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে উস্মা প্রকাশ করেছেন। দেশের বাইরে বাংলাদেশ বিষয়ে এমন নেতিবাচক বক্তব্য আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর কালো তিলক এঁকে দিয়েছে। এটা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এটা এক ধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানি। বাংলাদেশে যাতে ধর্মীয় দুর্যোগ সৃষ্টি হয় তার ইশারা। আমরা প্রিয়া সাহার ওই সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কান না দেওয়ার জন্য একান্তভাবে অনুরোধ জানাই। লাল-সবুজের পতাকার নাম বাংলাদেশ। যে পতাকার জমিনে ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। মাঝখানে কোটি প্রাণের রক্তের লাল আভা। যা প্রাপ্তিতে দুই লাখের বেশি মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময় বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষ কাঁধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। সেখানে হিন্দু, মুসলিম বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষের সমান অংশগ্রহণ ছিল। ৪৭-এরও আগে থেকে তখনকার বঙ্গভূমির জনগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা শুরু করে। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভীত রচনা করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছুদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট ছিল। সম্প্রীতির বুকে প্রথম পেরেক ঢুকানো হয় ১৯৭৫ সালে। ৭৫-এর পর থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলদেশের সবুজ চত্বর ক্ষতবিক্ষত করতে উঠেপরে লেগে যায় একটি গোষ্ঠী। এর ধারাবাহিকতায় জিয়া, এরশাদসহ বিভিন্ন সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রীতি বিনষ্টে চেষ্টা চলে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়েও উস্কানি এবং ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। নির্যাতনের শিকার হন ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবার। ভেঙে ফেলা অনেক মন্দির। ভারতে একই ঘটনার জের ধরে ঐতিহ্যবাহি বাবরি মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসবই ধর্মীয় মৌলবাদিদের কর্মকা-। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কখনো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকে মেনে নেয়নি। যখন ধর্মীয় উস্কানির ঘটনা ঘটেছে তখনই প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। যেমন ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতাকে মেনে নেয়নি। তেমনি ২০১২ সালে রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনা মেনে নেয়নি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যতনও মেনে নেয়নি। বিশ^ দরবারেও এব্যাপারে আওয়াজ তুলেছে সব সময়। মোট কথা শান্তির বাংলাদেশ কখনো অশান্তিকে সমর্থন করেনি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ শান্তির জনপদে রূপ নিতে থাকে। হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষ যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে পুনর্গঠনে লেগে যায়। তখনই শুরু হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ কেন শান্তির জনপদ হবে? বাংলাদেশে কেন সম্প্রীতি থাকবে? শান্তির বাংলাদেশকে অশান্তির জনপদে পরিণত করতেই হবে। তাই শান্তির জনপদে অশান্তির থাবা পড়ে। থেকে থেকে কেঁপে ওঠে সোনার বাংলা। ২০১২ সালের পর আবারো বাংলাদেশ শান্তির পথে হাঁটা শুরু করে। জঙ্গীবাদের উত্থান প্রতিহত করতে সচেষ্ট হয় বাংলাদেশ। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা বন্ধে যখন গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ, ঠিক তখনই আবার শুরু হয় ধর্মের ব্যবহার। না এবার আর হত্যা নয়। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে এমন নালিশ পৌঁছায় আমেরিকা মুলুকে। প্রিয়া সাহা নামে এক নারী বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের নতুন কল্পকাহিনী তুলে ধরেন টাম্পের কাছে। যা সম্প্রীতির বাংলাদেশের বুকে আরেকটি নতুন পেরেক। এতো দিন নানা নামে ধর্মীয় উস্কানি হয়েছে। তবে দেশের বাইরে কেউ এধরণের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য তুলে ধরেছেন এমন নজির জানা নেই। প্রিয়া সাহার বক্তব্য ‘বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন।’ এটা কেবল মিথ্যাচারই নয়। বিশ^ দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার সামিল। তার ওই বক্তব্যের কারণে কেবল বাংলাদেশে নয়, সম্প্রীতির হুমকীতে পড়বে ভারতসহ গোটা এশিয়া। এখান থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। কেবল বক্তব্য বিব্রিতি নয়, রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ঝড় উঠেছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যেন নতুন সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। ইতিমধ্যে আমাদের স্বরাস্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা চাই, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং পররাস্ট্রনীতি ঠিক রেখে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রিয়া সাহার ওই বক্তব্য যেন আমাদের সংঘাতের দিকে নিয়ে না যায়। আমরা যেন সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে কি বলল সেটা যেন মূখ্য না হয়। আমরা যেন কোন উস্কানিতে কান না দেই। সেইজন্য প্রচারণা চালানো দরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সকলের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ যেন সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দিকে না যেতে পারে সেজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।