সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহব্বানে ২৬ বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

সাম্প্রদায়িক হামলা ও প্রতীমা ভাংচুরের বিরুদ্ধে ২৬ বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ এবং রাষ্ট্র ও জনসমাজকে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহব্বান জানিয়েছেন তারা। বিবৃতির মাধ্যমে এমন দাবি জানায় ২৬ বিশিষ্ট নাগরিকদের ।
“আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে লক্ষ্য করলাম যে,দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুসম্প্রদায় তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারল না । বিভিন্ন পুজামন্ডপে হামলা, প্রতীমা ভাংচুর, কোথাও কোথাও বাড়ী ঘরে হামলাকরে এমন এক ভীতিকর ন্যাক্কারজনক পরিবেশ তৈরী করা হোল,যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে কারোর জন্য গ্রহনযোগ্য হতে পারে না ।আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িত ও এরপেছনের হোতাদের চিহ্নিত, গ্রেফতার ও দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানায় ।একই সাথে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধেওব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
গত ১৩ অক্টোবর ভোররাতে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাডরে এক পুজামন্ডপে‘পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননা’ করা হয়েছে বলে কুমিল্লাসহ দেশেরবিভিন্ন পুজামন্ডপে হামলা ও প্রতীমা ভাংচুর করা হয় , যা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ।অতীতেও দেখা গেছে,নানা সময়ে ধর্মকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে গুজবছড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হামলা ও নৈরাজ্য সৃস্টি করে আমাদেরসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট করার চেস্টা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ফায়দা লোটা হয়েছে । ঐসব ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি । এমনকি কোথাও কোথাও রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই বিচারহীনতা আবার অপরাধ সংগঠিত করতে মদদ জুগিয়েছে ।এইসব অপশক্তি এখনও তৎপর। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাথে বিভিন্ন সময়েআইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম জোড়দার করে মানবিকতার সংগ্রামকে সামনে আনা হয় নি। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী দেশগুলিকেও আজকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ আবাস ভূমি হিসাবে গড়ে তোলা যায় নি। ধর্মকে অপব্যবহারের যে কোন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা , সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিদ্বেষী সকল অপশক্তিকে প্রশ্রয় না দেয়া, জংগী ধর্মভিত্তিক শক্তির রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠ ভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করা জরুরী হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্র ও জনসমাজকে সম্মিলিত ভাবে আজ এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫০ বছরের বাংলাদেশকে আমরা পেছনের দিকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না । তাই এধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ,গনতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির পক্ষের সকল অসম্প্রদায়িক, গনতান্ত্রিক, প্রগতিশীল শক্তি, ব্যক্তি ও প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মানুষদের সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সুলতানা কামাল (মানবাধিকার নেত্রী), ব্যারিষ্টার শফিক আহমদ ( প্রাক্তন আইন মন্ত্রী), ডাঃ সারোয়ার আলি (মুক্তিযুদ্ধ মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাষ্টি),খুশী কবীর (সভানেত্রী, নিজেরা করি),রামেন্দু মজুমদার (নাট্য ব্যক্তিত্ব), আবুল মোমেন (শিক্ষাবিদ),অধ্যাপিকা মাহ্ফুজা খানম (শিক্ষাবিদ),ড: সেলিম জাহান ( আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ),রাশেদা কে চৌধুরী ( প্রাক্তন শিক্ষা উপদেষ্টা, তত্তাবধায়ক সরকার),ডাঃ রশিদ ই মাহবুব ( প্রাক্তন বিএমএ সভাপতি), ড: মইনুল ইসলাম ,আনোয়ার হোসেন ( প্রাক্তন ইউ জিসি অধাপক),ড: আবুল বারকাত (সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (সম্মানিত ফেলো, সিপিডি), মেঘনা গুহঠাকুর্তা (নির্বাহী পরিচালক রীব) ,ডঃ তাজুল ইসলাম (প্রাক্তন প্রো উপাচার্য জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক এ এন রাশেদা, অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান (সম্মানিত ফেলো, সিপিডি), অধ্যাপক ড: সুশান্ত কুমার দাশ,অধ্যাপক বদিউর রহমান, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন,ইন্জিনিয়ার আবুল কাশেম (প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ), শামসুল হুদা (নির্বাহী পরিচালক, এলআরডি), সিনিয়র এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী , মাহ্মুদ সেলিম ( সাং স্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-উদিচী),ডাঃ লেনিন চৌধুরী (চিকিৎসক ও খেলাঘরের বিশিষ্ট নেতা),এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী (গণতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতি),অধ্যাপক এম এম আকাশ ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।