সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু শনিবার

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও স্টেশনের অদূরে তেলবাহী একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। এর ফলে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত লাইনচ্যুত বগি উদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজ চলছিল।
এ দিকে দুর্ঘটনার পর বগি থেকে বেরিয়ে আসা জ্বালানি তেল নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোররা বোতল, বালতি, কলস, জগ, মগ ভরে তেল নিতে থাকেন। তবে একপর্যায়ে পুলিশ তেল নিতে আসা লোকজনকে সরিয়ে দেয় এবং পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে।
মাইজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মনির হোসেন জানান, দুর্ঘটনা কবলিত বগিগুলো উদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতে শনিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনযাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, মাইজগাঁও স্টেশনের অদূরে বিয়ালীবাজার এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী তেলবাহী একটি ট্রেনের আট বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে পড়ে। এতে বগিতে থাকা ডিজেল আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বগি উল্টে রেলের প্রায় আট শ মিটার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওই ট্রেনের ১২ বগিতে ১ লাখ ৬০ হাজার লিটার ডিজেল ছিল বলে জানিয়েছেন, রেলওয়ের পরিবহন পরিদর্শক তৌফিকুল আজিম। এর মধ্যে আট বগির ডিজেল পড়ে নষ্ট হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে।
পরে আখাউড়া ও কুলাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে দুর্ঘটনাকবলিত বগি উদ্ধার শুরু করে। পাশাপাশি রেলের প্রকৌশল শাখা ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
দুর্ঘটনার কারণে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস মাইজগাঁও স্টেশনে আটকা পড়ে। রাতের এই ট্রেনের যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
ওই ট্রেনের যাত্রী সিলেট নগরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, তিনি উপবনে সপরিবারে ঢাকা যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টা ট্রেনে বসে থেকে পরে নিশ্চিত হন ওই ট্রেন আর যাবে না। এরপর গভীর রাতে একটি অটোরিকশায় তিনি কোনোমতে বাসায় ফিরেছেন।
তিনি জানান, গভীর রাতে ট্রেনটির যাত্রা বাতিল হলে শত শত যাত্রী অসহায় হয়ে পড়েন।
দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে ফেঞ্চুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হলে বড় অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। তবে এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
তিনি জানান, বগি লাইনচ্যুতের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেন এবং অগ্নি নির্বাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। পাশাপাশি সেখানে জড়ো হওয়া লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেন।
এদিকে যাত্রী দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কুলাউড়া থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু রাখার চেষ্টা চলছে।
কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মুহিব উদ্দিন জানান, ঢাকা থেকে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস শুক্রবার সকালে কুলাউড়া স্টেশন পর্যন্ত এসে যাত্রা শেষ করে। এরপর এটি জয়ন্তিকা নামে কুলাউড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। একইভাবে পারাবত এক্সপ্রেসও কুলাউড়া পর্যন্ত এসে পরে আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।