সেই মা’ এর পাশে বরিশালের জেলা প্রশাসক

বরিশালে ভরনপোষন না দেয়ায় সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই অসুস্থ বৃদ্ধা মা’কে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার।
সোমবার ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর বদ্যপাড়ায় বৃদ্ধা জাহানূর বেগমের ভাড়া বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করেন জেলা প্রশাসক।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আল মামুন তালুকদার,এনডিসি নাজমুল হুদা,সমাজ প্রভেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দার অসুস্থ্য জাহানূর বেগমের বড় সন্তান সবুর হাওলাদার ও ছোট মেয়ে সাহিদা আক্তারের কাছে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন। একই সাথে তার সম্পত্তি বিক্রী নিয়ে অন্যান্য সন্তানের সাথে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন। পরে সমাজসেবা অদিদপ্তরের জটিল রোগে সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
উল্লেখ ৪ সন্তানের মধ্যে ২ সন্তান ভরনপোষন না দেয়ার অভিযোগ এনে গত ২৮ অক্টোবর জাহানূর বেগমের পক্ষে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অসুস্থ্যতার জন্য তিনি আদালতে আসতে না পারায় আদালতের বিচারক মোঃ মাসুম বিল্লাহ নিজে তার বাসায় গিয়ে জবানবন্দী গ্রহন করে মামলা আমলে নেন এবং ওই দুই সন্তানের বিরুদ্ধে সমন জারীর নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার ওই বৃদ্ধের বড় সন্তান আব্দুস সবুর হাওলাদারের মাধ্যমে সংশ্লিস্ট আদালতে এই অভিযোগ দায়ের করেন নগরীর বৈদ্যপাতা এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা জাহানুর বেগম (৭০)।
সংশ্লিস্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. চার্চিল জানান, ৭০ বছর বয়সের বিধবা জাহানুর বেগম প্যারালাইজড সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। অভিযোগে তিনি তার অপর দুই সন্তান খুলনার শেখপাড়া পুরাতন মসজিদ রোডের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান (৫০) ও বরিশাল নগরীর ধোপা বাড়ির মোড় এলাকার বাসিন্দা সাবিনা আক্তারকে (৪০) অভিযুক্ত করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদীর স্বামী সিরাজুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মারা যায়। তার স্বামীর খুলনায় রেখে যাওয়া একটি বাড়িতে এক ছেলে মোস্তাফিজুর সহ বসবাস করেন তিনি। জাহানুর ব্রেইন স্ট্রোক, মেরুদন্ড অচল ও প্যারালাইজড সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও মোস্তাফিজুর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে অপারগ। পরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বরিশালে এসে অপর দুই সন্তান মো. সবুর ও সাহিদা আক্তার চিকিৎসা ও ভরনপোষণের দায়িত্ব নেয়। তারা তার চিকিৎসায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে।
বর্তমানে তারাও আর্থিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। অথচ প্রতিদিন চার চিকিৎসায় অর্থের প্রয়োজন। অভিযুক্ত দুই সন্তানের কাছে চিকিৎসা ভরনপোষণ দাবী করলে তারা অপারগতা প্রকাশ করে। বাধ্য হয়ে তিনি খুলনার সম্পত্তি বিক্রি করার উদ্যোগ নেয়। সম্পত্তি কিনতে আগ্রহীরা বরিশালের বাসায় বাদীর সাথে যোগাযোগ করলে অভিযুক্ত সন্তানদ্বয় তার ভাড়া বাসায় গিয়ে খুলনার সম্পত্তি বিক্রি না করতে হুশিয়ারী দেয়। এমনকি তাকে ভরনপোষণ এবং চিকিৎসাও দিতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়।